শিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে। রাজধানী কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শিশু চিকিৎসাকেন্দ্র ওহমাতদিত শিশু হাসপাতালে হামলায় দুজন মারা যান। বিস্ফোরণে হাসপাতালটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের চিফ অব স্টাফ অ্যান্ড্রি ইয়ারমাক সোমবার বলেন, হামলায় ৩৬ জন নিহত এবং ১৪০ জন আহত হয়েছেন।
রাশিয়া হাসপাতালটিকে লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, তারা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের খণ্ডকে আঘাত করেছে। তবে ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা ঘটনাস্থলে রাশিয়ার একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পেয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক লেসিয়া লাইসিটসিয়া বিবিসিকে বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত করার মুহূর্তটি চলচ্চিত্রের দৃশ্যের মতো ছিল। প্রথমে প্রখর আলো এবং তারপরে একটি ভয়ঙ্কর শব্দ। হাসপাতালের একটি অংশ পুড়ে গেছে এবং অন্য অংশে আগুন লেগেছে। এটি সত্যিই খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটস্কো বলেছেন, হাসপাতালে হামলায় মারা যাওয়া দুজনের মধ্যে একজন চিকিৎসক ছিলেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ আটকা পড়েছে বলে আশঙ্কা করছে উদ্ধারকারীরা। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে গণহত্যা চালানোর চেষ্টার অভিযোগ করেন।
মেয়র ক্লিটসকো আরও বলেন, ‘এখন পুরো বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে, কীভাবে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং কামিকাজ ড্রোন আমাদের শান্তিপূর্ণ শহরগুলোতে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের হত্যা করেছে। কিয়েভের ডিনপ্রোভস্কি জেলায় আরও একটি প্রসূতি হাসপাতাল রুশ হামলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এ ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছে।’
ওহমাতদিত কিয়েভের একটি বড় হাসপাতাল, সেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়। ডা. লাইসিতসিয়া বলেন, ‘এখন আমরা রোগীদের নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু, অনেক রোগীকে ইনটিউবেট করা হয়েছে এবং ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে। এইসব রোগীরা অন্য রোগীর সংস্পর্শে আসতে বা বাইরে যেতে পারেন না।’
হাসপাতালের কর্মকর্তারা ইউক্রেনের এক টিভিকে জানান, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া একটি ওয়ার্ডে ২০ আহত শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর গতকাল সোমবার ইউক্রেনীয় টেনিস খেলোয়াড় এলিনা স্বিতোলিনা উইম্বলডনে রাউন্ড অফ-১৬তে খেলার সময় কালো ব্যাজ পরেন।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘৪০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভি রিহ, স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাটোরস্ক শহরের ভবন এবং অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে। রাশিয়া আবারও আমাদের জনগণের ওপর, আমাদের ভূমিতে, আমাদের শিশুদের ওপর যে আঘাত করেছে, তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী পশ্চিমা প্রতিক্রিয়ার আহ্বান জানাই।’
দিনিপ্রোর আঞ্চলিক প্রধান সার্জি লিসাক বলেন, দিনিপ্রো শহরে একজন নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন। পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের পোক্রোভস্কে তিনজন নিহত হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানান। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী।
ওহমাতদিত হাসপাতালে হামলার নিন্দা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল রাশিয়াকে ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদের নির্মমভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তু করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। যুক্তরাজ্যের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, পুতিনের অবৈধ যুদ্ধের জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
জাতিসংঘের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, শিশু হাসপাতালসহ অন্য একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে হামলার ঘটনা মর্মান্তিক। সাধারণ নাগরিক ও তাদের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে নিষিদ্ধ। এ ধরনের হামলা অগ্রহণযোগ্য এবং অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
ইউক্রেনে জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ মিশন বলেন, রাশিয়া হামলা জোরদার করার পর থেকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধে গত এক বছরের মধ্যে মে মাসে সবচেয়ে বেশি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।