জীবনধারা

পুষ্টিগুণে অতুলনীয় জামে রয়েছে যেসব উপকারিতা

মোহনা অনলাইন

গ্রীষ্মের অন্যান্য সুস্বাদু ফলের মতো জামও বেশ জনপ্রিয়। জাম খুব উপকারী ফল। জাম কিন্তু অনেক ধরনের পুষ্টিগুণে ভরা। পুষ্টিগুণে অতুলনীয় এ ফলটিতে আছে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্যালিসাইলেট, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফুকটোজসহ অসংখ্য উপাদান। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের বেশিরভাগেরই জানা নেই।

চলুন জেনে নেওয়া যাক জামের উপকারিতা—

জামে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। জার্নাল অব এথনোফার্মাকোলজির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জামে ট্যানিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা প্রদাহ কমায় এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে সাহায্য করে জাম। ফলটিতে জ্যাম্বোলিন এবং জাম্বোসিনের মতো যৌগ রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। মেডিসিনাল ফুড জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, এই যৌগগুলো স্টার্চকে চিনিতে রূপান্তরকে ধীর করতে সাহায্য করে।

ভিটামিন ‘সি’, আয়রন এবং অ্যান্থোসায়ানিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস জাম, যা ফলটিকে গাঢ় বেগুনি রঙ দেয়। জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

গ্রীষ্মের রোদ আমাদের ত্বকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তীব্র রোদে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। জামে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি এবং অ্যাস্ট্রিনজেন্ট বৈশিষ্ট্য আমাদের ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং এই সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন জার্নালের একটি গবেষণায বলছে, জাম ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং দাগ কমায়।

জামে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষণা অনুসারে, এই পুষ্টি উপাদানগুলো শ্বেত রক্ত ​​​​কোষের উৎপাদন বাড়ায়, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যারা বাড়তি ওজন কমাতে চাইছেন তাদের জন্য দুর্দান্ত ফল জাম। ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি এতে, যা আমাদের দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে ও সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণ কমায়। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফুড সায়েন্সেস অ্যান্ড নিউট্রিশনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, জামে থাকা ফাইবার শুধু হজমেই সাহায্য করে না, ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

জাম আমাদের হার্টের জন্যও উপকারী। এতে রয়েছে পটাসিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। জার্নাল অব কার্ডিওভাসকুলার ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিকসে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, জামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে সার্বিক কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

গ্রীষ্মের তাপের কারণে ডিহাইড্রেশন হয় এবং শরীরে টক্সিন জমা হয়। জাম প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এটিতে উচ্চমাত্রায় পানি রয়েছে এবং মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে এবং আমাদের হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে। জার্নাল অব ট্র্যাডিশনাল অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনের একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, জাম লিভার এবং কিডনি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

জাম আমাদের দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। জামের অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট বৈশিষ্ট্য মুখের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য উপকারী। দ্য জার্নাল অব ন্যাচারাল সায়েন্স, বায়োলজি এবং মেডিসিন বলছে, জামের ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য মাড়ির রোগ এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button