কোটাবিরোধীদের স্লোগানে মুখর অবরুদ্ধ শাহবাগ। কোটা সংস্কারের দাবিতে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি অনুযায়ী শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া ‘ স্লোগান দেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর শাহবাগ ও সায়েন্সল্যাব মোড় ব্লক করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে একে একে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ব্লক করতে থাকেন।
যদিও প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আদালতের দরজা তাদের জন্য সবসময় খোলা আছে। তিনি সবাইকে ঘরে ফিরে যেতে বলেছেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দাবি, শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলে নতুন আন্দোলনের পাঁয়তারা করছে বিএনপি। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএনপি।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে তৃতীয় দিনের মতো বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিতে ‘সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক অবরোধে’ নামেন তারা। সকালে সাড়ে ১০টা দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও মধুর ক্যান্টিনের সামনে আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে সড়কে নামতে শুরু করেন।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড বসিয়েছিল পুলিশ। তবে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা পুলিশের সেই ব্যারিকেড ভেঙে বিভিন্ন সড়ক ব্লক করতে থাকেন। সকাল থেকে আগারগাঁওয়ের চার রাস্তার মোড়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ করেছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। সেখানে তারা গান ও স্লোগানে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া মেট্রোরেলের পিলার গুলো ব্যবহার করে রাস্তা জুড়ে লম্বালম্বি দড়ি টানিয়ে দেন। মিরপুর থেকে বিজয় সরণি ও আগারগাঁও থেকে শ্যামলী সড়কটিতে চলাচল করা গাড়িগুলোকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় আন্দোলনকারীরা অধিকাংশ শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত হয়েছেন। আগারগাঁও ব্লক হওয়ার খবরে মিরপুর থেকে মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ীগামী বাসগুলো মিরপুর-১০ নম্বর মোড় থেকেই ঘুরিয়ে নিচ্ছে। অনেক বাস মিরপুর-১২ এর স্ট্যান্ড থেকেই ছাড়ছেন না। এতে প্রত্যেকটি মোড়ে যাত্রীরা বাস সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়ছেন। তবে গণভবনের পাশ দিয়ে সংসদ ভবন ও চন্দ্রিমা উদ্যানের মাঝের সড়ক দিয়ে বিজয় সরণি ও ওভার ব্রিজ হয়ে সাত রাস্তার দিকে কিছু যানবাহন চলাচল করছে।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ফার্মগেটেও সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ফার্মগেট ওভার ব্রিজের নিচে সড়কের দুপাশেই অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে রাস্তায় থাকা কোনও যানবাহন চলাচল করতে দিচ্ছে না আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে কয়েকটি সড়ক ও সংযোগ রাস্তাগুলোতে অনেক গাড়ি আটকা পড়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার জন্য পথ তৈরি করে দিতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের।
সড়ক দখল করে মিছিলে আন্দোলনকারীরা ‘দফা এক, দাবি এক’, ‘কোটা নট কামব্যাক’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটা না, মেধা? মেধা! মেধা!’, ‘ছাত্র সমাজের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘বাংলা ব্লকেড সফল করো!’, ‘সারা বাংলা অবরোধ, অবরোধ, অবরোধ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। অবরোধে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান লেখা হেডব্যান্ড মাথায় পরেন। অনেকের হাতে রয়েছে জাতীয় পতাকা। আবার কেউ কেউ জাতীয় পতাকা বেঁধেছেন মাথায়।
উল্লেখ্য, কোটা বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপর গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। যদিও গতকাল বুধবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তবে, শিক্ষার্থীরা আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন, তাদেরকে পরামর্শ দিন, তারা কেন নির্বাহী বিভাগের কথা বলে? নির্বাহী বিভাগের যেকোনো সিদ্ধান্ত তো আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা।’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো আইনজীবীদের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন। আমরা সেটি গুরুত্বসহ শুনব।’
যদিও এসব কিছু তোয়াক্কা না করেই সড়কে নেমেছেন কোটাবিরোধীরা। তারা বিকেল সোয়া ৫টার দিকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধ করেছেন। এরপর থেকে ওই এলাকা স্লোগানে মুখরিত।