Top Newsজাতীয়শিক্ষাসংবাদ সারাদেশ

মধ্যরাতে ঢাবিসহ উত্তাল সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

মোহনা অনলাইন

মধ্যরাতে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে স্লোগান সহকারে বের হয় বিশাল বিশাল মিছিল। কোটা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদে তাঁরা স্লোগান দেন। ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসিতে জড়ো হন হাজারো শিক্ষার্থী।

রোববার (১৪ জুলাই) রাত পৌনে ১১টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। ছাত্র ও ছাত্রী হলগুলো থেকে বের হওয়া মিছিলগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে রাজু ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে জড়ো হতে থাকে। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
বিজয় একাত্তর হল, স্যার এফ রহমান হলসহ আরও কয়েকটি হলে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় ছাত্রলীগ। বিজয় একাত্তর হলের গেট বন্ধ করে দেয় ওই হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা। শিক্ষার্থীরা জোর করে ভিতরে ঢুকতে চাইলে তাদের ওপর বারবার আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ওই হলের পদপ্রত্যাশী নেতারা। যদিও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা হল গেট খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত একত্তরসহ সব হল থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সমাবেশে যোগ দেন। ওদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে তাঁতীবাজার এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অবশ্য তাঁরা সেখানে ২০ মিনিট অবস্থান করে আবার ক্যাম্পাসের দিকে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নেন। এদিকে রাত ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে জড়ো হতে থাকেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন রাজধানীর পরীবাগের ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে।
এছাড়া রোববার রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হয়ে টিএসসিতে অবস্থান নেন। তাদের অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও রাজপথে জড়ো হন। এ সময় তাদের মুখে শোনা যায়, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার-সরকার’, ‘রাজাকার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ প্রভৃতি স্লোগান।
শিক্ষার্থীরা জানান, চলমান সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কিছুদিন ধরে উত্তপ্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী আজ চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই বক্তব্য তাদের স্তম্ভিত ও ব্যথিত করেছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোনো কোটা চায় না। দেশের মানুষ চায় মেধার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হোক।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের কোটা আন্দোলন মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ছিল না। এটি আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে বৈষম্য তৈরি করেছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছিল। কিন্তু আমরা প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেখতে পেলাম যে, তিনি দেশের শিক্ষার্থীদের হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন। পাশাপাশি আমাদের ছাত্রসমাজের এক দফা দাবি মেনে নিয়ে সংসদে আইন পাস করার ব্যবস্থা করবেন।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি হলো, সব গ্রেডে সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতিতে সংশোধন আনা।
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button