আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, শপথ অনুষ্ঠানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। একটা প্রস্তাব ছিল বিকেলে করার। সেটি অত্যন্ত টাইট শিডিউল হয়ে যায়। কারণ, ড. মোহাম্মদ ইউনূস ২টা ১০ মিনিটের দিকে দেশে আসবেন। এর পরপরই আয়োজন করা কঠিন। এ জন্য রাত ৮টার দিকে আয়োজন করতে পারি। মোট ৪০০ জন লোকের আয়োজন থাকবে।
গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সেনাসদরে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সেনাবাহিনী প্রধান। এ সময় সেনাপ্রধানের পাশে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন উপস্থিত ছিলেন। সেনাপ্রধান বলেন, অনেক ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। সেগুলো নিশ্চিত না হয়ে সামাজিকমাধ্যম বা গণমাধ্যমে প্রকাশ করবেন না। গুজব চলছে, গুজবে কান দেবেন না। নিশ্চিত না হয়ে গুজব রটাবেন না। নিবৃত্ত থাকলে ভালো হবে। তিনি বলেন, পুলিশ পুনর্গঠনের কাজ চলছে।
নতুন পুলিশপ্রধান নিয়োগ হয়েছে। পুলিশ বিশাল একটি বাহিনী। পুলিশের কাজ সেনাবাহিনী দিয়ে করা সম্ভব নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-লুটপাটের খবর আসছে। লুটতরাজ সৃষ্টি করবেন না। যারা লুটতরাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহিংসতায় জড়িতদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে। শিগগিরই লুটতরাজ বন্ধ হয়ে দেশের পরিস্থিতি অবাধ সহজ অবস্থায় ফেরত চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনী সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে। সবাই মিলে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। তিন বাহিনী জনগণের সঙ্গে আছে। আমরা সুন্দর ভবিষ্যতে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি। আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী কাজ করছে।
সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, আমি দেখেছি শিক্ষার্থীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করছে। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের এ দায়িত্ব পালন দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তারা রাস্তার ময়লাও পরিষ্কার করেছে। আমার বিশ্বাস, তারা এ ভালো কাজগুলো ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাবে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সেনাবাহিনীর সব ইউনিট মাঠে নামানো হয়েছে। সচিবালয়, কূটনীতিকপাড়া, সরকারের সচিব, বিচারপতি, তাঁদের বাসভবনসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ছাত্ররা সহযোগিতা করছে। তাদের আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ।
লুটতরাজ ও ডাকাতির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। পুলিশ পুনর্গঠন হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। লুটতরাজের সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে। ছাত্ররা আমাদের সাহায্য করছে। তারা বিভিন্ন স্থাপনা পাহারা দিচ্ছে। আমাদের সব ফোর্স মাঠে কাজ করছে। তার পরও কোনো ব্যর্থতা থাকলে দায় আমার। দেশে পুলিশের যে অনুপস্থিতি রয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি সেই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন সেনাপ্রধান।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে ঢাকায় হাজারো ছাত্রজনতার ঢল নামে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করার দাবি ওঠে।