বাংলাদেশে সরকার পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে বেশ সরব ভারতীয় নেতারা। এবার তাদের কাতারে শামিল হলেন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী। ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী চারদিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন ।
এই সফরে ভারতীয় প্রবাসীদের পাশাপাশি, মার্কিন আইনপ্রণেতা, ব্যবসায়ী ও একাডেমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। তবে এই সফরে তিনি বাংলাদেশ নিয়েও সরব হয়েছেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সেখানে বৈঠকে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনেও কথা বলেছেন রাহুল। বাংলাদেশে প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, নির্দিষ্ট কোনও দল কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক নয়, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা ভবিষ্যতে যেকোনও সরকারের সাথে কাজ করতে আগ্রহী তারা।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটনের মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন রাহুল গান্ধী। সেখানেই এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, বাংলাদেশে চরমপন্থী উপাদান নিয়ে ভারতে উদ্বেগ রয়েছে। আমাদের মধ্যেও এই উদ্বেগের কিছুটা রয়েছে। তবে আমি নিশ্চিত যে বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। আমরা বর্তমান সরকার বা তারপরে অন্য যে সরকার আসবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে সক্ষম হব।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় প্রেসক্লাবে মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ-পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে মোদির নীতিকে সমর্থনের কথা জানান রাহুল গান্ধী। দেশটিতে তার চার দিনের অনানুষ্ঠানিক সফর মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।
রাহুল এদিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, সন্ত্রাসবাদের প্রবাহ বন্ধ না করা পর্যন্ত পাকিস্তানের সাথে কোনও আলোচনা না করা, ইসরায়েল ইস্যু ও বাংলাদেশে চরমপন্থি উপাদানসহ ভারতের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান প্রধান ইস্যুতে তার দল কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন বিজেপির পাশে আছে।
তবে ভারতের ৫৪ বছর বয়সী এই নেতা চীনকে নিয়ে মোদির নীতির সাথে একমত পোষণ করেননি। এছাড়া তিনি অভিযোগ করেছেন, চীনা সৈন্যরা আকারে দিল্লির আয়তনের সমান লাদাখে ভারতীয় অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এই সংবাদ সম্মেলনের আগে মার্কিন সংসদ ভবন ক্যাপিটল হিলে একদল আইনপ্রণেতার সঙ্গে বৈঠক করেন রাহুল। সেখানেও বাংলাদেশের ইস্যু নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
কংগ্রেস নেতা বলেন, আমরা এটি (বাংলাদেশ) উত্থাপন করেছি। তারাও আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। দেখুন, আমরা যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে। আমরা এটি বন্ধ করতে চাই। সত্যি বলতে, এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। আমাদের দিক থেকে আমাদের সরকারের দায়িত্ব চাপ দেয়া যাতে সহিংসতা বন্ধ হয়।
পাকিস্তান ইস্যুতে রাহুল বলেন, আমাদের দেশে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদের প্ররোচনা দুই দেশকে পিছিয়ে রেখেছে। পাকিস্তান আমাদের দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা আমরা মেনে নেব না। আমরা এটা মেনে নেব না এবং যতক্ষণ তারা এটি করতেই থাকবে, আমাদের মধ্যে সমস্যা থাকবে। কাশ্মির ইস্যুটি দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশকে সংলাপ থেকে দূরে রাখছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না।
যুক্তরাষ্ট্রে চারদিনের একটি বেসরকারি সফর করেছেন রাহুল। মঙ্গলবার তার এই সফর শেষ হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইস্যু ছাড়াও ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, চীন ও পাকিস্তান ইস্যুতেও কথা বলেন রাহুল।