অভিযান চালিয়ে চেয়ারম্যানকে আটকের চেষ্টা, ছাড়িয়ে নিলেন স্থানীয়রা
পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ায় ভজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিনের বাড়িতে মাদক আছে এমন গোপন তথ্যে সেখানে অভিযান চালায় বিজিবি। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করতে গেলে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন বিজিবি সদস্যরা। তাদের আটকে রেখে ঢাকা-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে যান চলাচলও বন্ধ করে দেন চেয়ারম্যানের সমর্থকরা।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে এ ঘটনা ঘটে এবং বিজিবি সদস্যদের কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে বিজিবি ১৮ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক (সিইও), তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং বিএনপি নেতাদের মধ্যস্থতায় বিকেলে বিজিবি সদস্যদের ছেড়ে দেন স্থানীয়রা। এদিকে জুমা নামাযের পরপরই ভজনপুরে তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিষয়টি সুরাহা হলে বিকেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে বেশ কয়েকটি গাড়ি নিয়ে বিজিবির কিছু সদস্য সীমান্তবর্তী ভজনপুরের ভাঙ্গীপাড়া গ্রামে চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রবেশ করেন ও পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেন। পরে ১০৭ বোতল ফেনসিডিল ও বাড়ির সদস্যদের মোবাইল ফোন জব্দ করে বিজিবি। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে চেয়ারম্যানের হাজার হাজার সমর্থক এসে প্রতিবাদ করেন ও বিজিবির সদস্যদেরকে আটকে দেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আমাদের ইউনিয়নের (ভজনপুর) চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিন ফেনসিডিল তো দূরের কথা, পান বিড়ি সিগারেটও খান না। কয়েক দিন থেকে তিনটি ভারতীয় গরু আটকের পর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিজিবির সম্পর্কের টানাপড়েন চলছিল। এ ঘটনার জের ধরে বিজিবি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাকে গ্রেপ্তার করতে আসে। গ্রামবাসীরা এই সাজানো ঘটনাটি বুঝতে পারলে বিজিবির গাড়ি আটকে দেন। পুলিশের গাড়ি থেকে চেয়ারম্যানকে নামিয়ে নেওয়ার পর বিজিবি সদস্যদের আটক করে রাখা হয়। বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিজিবি সদস্যদের সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল।
বিজিবি জানায়, অস্ত্র ও ফেনসিডিল আছে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে অভিযানে চালানো হয়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার পুলিশ সদস্যরাও।
পরে ১৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি, মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার সরকার, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহদৎ হোসেন রঞ্জু, সদস্য সচিব রেজাউল করিম শাহীন উপস্থিত হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় বিজিবির অধিনায়ক স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বলেন, একটা ঘটনা ঘটতেই পারে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
ইউপি চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিন জানান, গত তিন দিন আগে আমার পরিষদের কয়েকজন সদস্য তিনটি ভারতীয় গরু আটক করে। ভূতিপুকুর সীমান্ত ফাড়ির বিজিবি সদস্যরা গরু তিনটিকে চাইলে সেগুলো খোয়াড়ে দেওয়া হয়। যেহেতু সেগুলো জনপ্রতিনিধিরা আটক করেছে তাই গরুগুলোর মালিক বের হয় কিনা জানার জন্য কয়েকদিন খোয়াড়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে ১৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক জামালউদ্দিনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় এবং তাদের সঙ্গে আমার দূরত্ব তৈরি হয়।
তিনি বলেন, পরে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ কিছু বিজিবি সদস্য আমার বাড়ি ঘেরাও করেন। আমার ঘরে প্রবেশ করে আমাকে বলেন, যে আপনার ঘরে ফেনসিডিল আছে। এরপর একটি বস্তা দেখিয়ে বলে যে এই বস্তায় ফেন্সিডিল আছে। পরে আমাকে বিজিবির গাড়িতে উঠতে বলেন। আমি তখন পুলিশের গাড়িতে উঠতে চাই। এ সময় শতশত গ্রামবাসী এসে আমাকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে নেন।
১৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক জামালউদ্দিন জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ বিজিবির টু আই সি মেজর রিয়াদ মোর্শেদসহ বিজিবির সদস্যরা চেয়ারম্যানের বাড়িতে অভিযান চালান। আমার সঙ্গে চেয়ারম্যানের সম্পকের্র টানাপড়েন নেই। গরু নিয়ে বিজিবির সঙ্গে কোনো ঘটনা নেই। চেয়ারম্যানের বাড়িতে ১০৭ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। মাদকগুলো থানায় জমা দেওয়া হবে।
বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক বলেন, অস্ত্র ও ফেনসিডিল আছে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানোর জন্য আমাদের সদস্যরা চেয়ারম্যানের বাড়ি যান। চেয়ারম্যানকে আটক করলে স্থানীয়রা তাতে বাধা দেন। যেহেতু পাবলিক সেন্টিমেন্ট তার পক্ষে তাই আমরা মামলা করছি না। জব্দকৃত ফেনসিডিলগুলো থানায় জমা দেওয়া হবে।