দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অনুমোদন দেয় আদালত। দেশটির পার্লামেন্টে অভিশংসিত হওয়া এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সামরিক আইন আরোপের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় স্বল্পকালীন সামরিক আইন ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক সংকটে চলছে। ইউন ও তার একজন উত্তরসূরিকে পার্লামেন্টে অভিশংসন করা হয়েছে।
ইউন হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো। আদালতের পরোয়ানা অনুযায়ী, তদন্তকারীরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪৮ ঘণ্টা হেফাজতে নিতে পারবেন।
তবে ইউনের নিরাপত্তা দল ও বিক্ষোভকারীদের প্রতিরোধের মুখে তদন্তকারীরা পরোয়ানা কার্যকর করতে সক্ষম হবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। এর আগে আদালতের অনুমতি থাকা সত্বেও প্রেসিডেন্টের অফিস ও ইউনের ব্যক্তিগত বাসভবনে প্রবেশ করতে তদন্তকারীদের বাধা দিয়েছিল প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা পরিষেবা কর্মকর্তারা। অতীতে সহযোগী ও সমর্থকদের বাধার মুখে বিশিষ্ট রাজনীতিকদের গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) ইউনের আইনজীবীরা বলেছেন, তদন্তকারীদের তাকে গ্রেপ্তার করার কোনো ক্ষমতা নেই, কারণ সামরিক আইন ঘোষণা প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক কর্তৃত্বের মধ্যে পড়ে।
ইউনের আইনজীবী ইউন গ্যাপ-জিউন বলেছেন, তিনি ‘আইনগত উদ্বেগের’ কারণে আগের তিনটি সমন প্রতিপালনে ব্যর্থ হয়েছেন। ইউনের বর্তমান অবস্থান জানা যায়নি, তবে তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতারা ইউনের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বর থেকে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। তবে দেশটির সাংবিধানিক আদালত যদি তার অভিশংসন বজায় রাখে, তবেই তাকে পদ থেকে অপসারণ করা সম্ভব হবে। সাংবিধানিক আদালতের ৯ সদস্যের বেঞ্চে বর্তমানে মাত্র ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। এর অর্থ হলো একজন বিচারপতি অভিশংসন প্রত্যাখ্যান করলেও ইউনকে অপসারণ করা যাবে না। বিরোধী আইনপ্রণেতারা আশা করেছিলেন, আরও তিনজন বিচারকের মনোনয়ন দেওয়া হলে ইউনের অভিশংসনের সম্ভাবনা বাড়বে, কিন্তু গত সপ্তাহে তাদের এ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু ভেটো দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে সামরিক বাহিনীকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ উৎখাত এবং বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বাধা দূর করার জন্য জরুরি ক্ষমতা আইনে অধ্যাদেশ জারি করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তীব্র বিক্ষোভের মুখে আদেশ প্রত্যাহার করতে হয়।