পাওনা টাকা চাওয়ায় মুরগীর খাদ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আইএসটি ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার জসিম উদ্দিনকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন মদিনা পোল্ট্রি ফিডের মালিক জহিরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ডিপো ম্যানেজার মনির। এ ঘটনায় প্রাণ সংশয় দেখা দেয়ায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিন।
জসিম উদ্দিন বলেন, মুঠোফোনে তাকে দেয়া হুমকির ফোন রেকর্ডও রয়েছে তার হাতে। যেটি প্রতিবেদককেও পাঠিয়েছেন তিনি। ওই রেকর্ডে মদিনা পোল্ট্রি ফিডের মালিকের সহযোগী ও ম্যানেজার মনির ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করেন বলেন, “তুই আমার সাবেক (স্যারকে) চিনছ না, তোর আইন দিয়ে যদি আমার কিছু ছিঁড়তে পারস ছিঁড়। তোর মতো কত আতিপাতি মাস্তান রাস্তায় ফেলে দিতে পারি। আমার স্যারকে চিনস, হে এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফের পার্টনার।’’
জিডিতে উল্লেখিত তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বিদেশ থেকে পোল্ট্রি মুরগির খাবারসহ অন্যান্য উপাদান আমদানি করে আইএসটি ট্রেডিং কর্পোরেশন। অন্যদিকে আইএসটি ট্রেডিং থেকে মালামাল ক্রয় করে নিয়ে ব্যবসা করে আসছে মেসার্স মদিনা ট্রেডিং কর্পোরেশন।
গেল বছরের ১০ নভেম্বর মদিনা পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ীক সম্পর্ক থাকার সুবাদে স্বাভাবিকভাবেই আইএসটি ট্রেডিং কোম্পানির কাছ থেকে এক হাজার টন পোল্ট্রি খাদ্য ক্রয় করে। যার বাজার মূল্য ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ওই মালামাল নিয়ে সীতাকুন্ড মডেল থানাধীন সলিমপুর ইউনিয়নস্থ পাইলন গুদাম, ভাটিয়ারী ওভারব্রিজের পাশে সবুজ গুদাম, ভাটিয়ারী কদমরসুলস্ত সার কার্পেট, ভাটিয়ারী বিএম ডিপোর পাশে কাশেম গুদাম এবং ভাটিয়ারী শহীদ মিনারের পূর্বদিকে ইট ভাটার ভেতরে গোয়ালীনি গুদামে গুদামজাত করে।
যদিও এখন পর্যন্ত সেসব মালামালের কোনো মূল্যই পরিশোধ করেন মদিনা পোাল্টি ফিড। বরং মালামাল নেয়ার পর থেকেই টাকা চাইলেই মদিনা ট্রেডিংয়ের চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা ডিপো ম্যানেজার মনির বিভিন্ন রকমের হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি দেখান।
জানতে চাইলে মদিনা ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার মনির বলেন, আমি কিছুই জানি না ভাই, আমিতো কোম্পানির মালিক না, এখানে চাকরি করি। হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে মনির বলেন, এ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারবো না। অভিযোগের বিষয়েও আমি কিছুই বলতে পারবো না। ওখানে, চট্টগ্রামের যে ইনচার্জ আছেন, আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় তিনি জানান, তিনি এখন বেনাপোলে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ফেরদৌসের পাসপোর্টে পাওয়া মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম ফেরদৌস। কিন্তু আমি কোনো ফিড কোম্পানিতে চাকরি করি না। আমি গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করি। বাড়িও চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকায়। যদিও পাসপোর্টে তার গ্রাম লক্ষ্মীপুর সদরে উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে মদিনা পোল্ট্রি ফিডের কাগুজে মালিক জহিরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার মুঠোফোন নাম্বার ও হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও মেলেনি কোনো উত্তর। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটির কাগুজে মালিক জহিরুল ইসলাম হলেও প্রকৃত মালিক আড়ালে থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া।
এ বিষেয়ে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা সম্পর্কে মনেই পড়ছে না বলে জানান। পরে ঘটনার দিনক্ষণ, বিএনপি ও হেফাজত ইসলামের নেতাদের সুপারিশের কথা উল্লেখ করার পর ঘটনা মনে পড়ে তার। তখন তিনি আমার সংবাদকে বলেন, এটা আমার থানা এলাকার বিষয়ই না। যদি আমার এলাকায় সংঘটিত কোনো ঘটনা হত, তাহলে আমি নিয়ে নিতাম। যদিও গতকাল মঙ্গলবার তারই থানায় এই ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ হয়েছে। ডায়েরি নং : ৬৮৯।