অবশেষে গাজায় কার্যকর হলো বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি। স্থানীয় সময় আজ রোববার সকাল সোয়া ১১টা থেকে থেকে এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
হামাস পরিচালিত গাজার সিভিল ডিফেন্স বলেছে, সকালে যে সময় থেকে যুদ্ধবিরতি শুরুর কথা ছিল, সেই সময় থেকে বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। যারমধ্যে ছয়জন গাজা সিটিতে, তিনজন উত্তরাঞ্চলে এবং একজন রাফায় প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ২৫ জন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে তিন নারী জিম্মির নাম প্রকাশ করেছে হামাস। তারা নিশ্চিত করেছে, যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে এই তিন নারী সবার প্রথমে মুক্তি পাবেন। তারা হলেন রোমি গোনেন, এমিলি দামানি এবং দোরোন স্টেনব্রিচার।
দখলদার ইসরায়েল এর আগে জানায়, হামাস যতক্ষণ পর্যন্ত জিম্মিদের নামের তালিকা না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না। তাই সকালে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও; তাদের সেনারা হামলা অব্যাহত রাখে। এতে করে যুদ্ধবিরতিটি শুরু হওয়ার দিনই ১০ জন নিহত হয়েছেন। যারা আশা করছিলেন আজকে থেকে গাজায় নির্ভয়ে চলাচল করতে পারবেন।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বন্দী বিনিময় চুক্তি নিয়ে আল-মায়াদিনকে এক বিশেষ সূত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে। গত শুক্রবার সূত্রটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস যেকোনো নারী বা শিশু বন্দীকে মুক্তি দিলে, প্রতি বন্দীর বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। একইভাবে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী কিংবা অসুস্থ বন্দীদের ক্ষেত্রে প্রতি বন্দীর বদলে ৩০ জন বয়স্ক বা অসুস্থ ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবে।
এ ছাড়া, একজন নারী ইসরায়েলি সেনাকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী এবং ১৫ বছরের কম সাজা বাকি থাকা আরও ২০ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। চুক্তির প্রথম ধাপে ২০১১ সালের বিনিময় চুক্তিতে মুক্তি পাওয়া কিন্তু পরবর্তীতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুনরায় গ্রেপ্তার হওয়া ৪৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।
তা ছাড়া, এই চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের আগের অভিযোগে পুনরায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাদের বাকি সাজা ভোগ করতে হবে না এবং মুক্তির শর্ত হিসেবে কোনো নথিতে স্বাক্ষর করতে হবে না। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, মুক্তির অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে হামাসকে জিম্মিদের নামের তালিকা সরবরাহ করতে হবে। তবে এখনো হামাস এই তালিকা প্রকাশ করেনি। রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। এর পর পেরিয়ে গেছে ১৫ মাসের বেশি সময়। এই সময়ে ইসরায়েলি হামলা প্রাণ হারিয়েছে ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি।