Top Newsআন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্র শত বছরের পুরোনো বন্ধুর সাথে আবারও নতুন করে

শাহীন রাজা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোধ-হয় প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। ফিরে যাচ্ছে দুশো বছরের পুরোনো মিত্র রাশিয়ার সাথে নতুন করে গাঁটছড়া বাঁধতে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব পূর্ব রাশিয়ার সম্রাট জারদের সাথে যে সম্পর্ক ছিল তা পুনঃস্থাপন করতে !

১৯১৩ সালের মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে উড্রো উইলসন নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পরই উইলসন ইউরোপের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকেই দুই মহাদেশের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় হতে থাকে। এই সময়ের মধ্যে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হয়েছে। আবার এই বিপ্লব ভেঙেও গিয়েছে। অন্তর্বর্তী সময়ে বিশ্বে দুটি মহাযুদ্ধ হয়ে গেছে।

দুটি মহাযুদ্ধ পরবর্তীতে বিশ্ব রাজনীতিতে আসে বিরাট পরিবর্তন। একদিকে আমেরিকা এবং ইউরোপ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়। অপরদিকে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাশিয়ার নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। বা সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান।

বিশ্বে রাজনৈতিক ভারসাম্য অনেকটাই ভেঙে পড়ে। এরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে একক মোড়ল হিসেবে আবির্ভূত হয়। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ ইচ্ছায় বিশ্ব নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পরিকল্পনা নেয়।

রুশ বিপ্লবের পর সমাজতান্ত্রিক রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে বিভিন্ন সামরিক প্রকল্প গ্রহণ করে। এরমধ্যে ন্যাটো সামরিক জোট অন্যতম। রাশিয়াও এর বিপরীতে পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো নিয়ে ওয়ারশো জোট গঠন করে। তবে সোভিয়েত ব্যবস্থাপনা ভেঙে যাওয়ার পর ওয়ারশো জোট ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু ন্যাটো জোট অব্যাহত থেকে যায়।

ন্যাটো জোট টিকিয়ে রাখতে প্রচুর সামরিক ব্যয় হয়। যা আমেরিকার বিভিন্ন নাগরিকের মতো ট্রাম্পের-ও পছন্দ নয়। কেননা এই সামরিক জোট অব্যাহত রাখতে বিশাল ব্যায় হচ্ছে। যার অধিকাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যোগান দেয়। তাই ট্রাম্প আর এই ব্যয় মেটাতে আগ্রহী নয়।

ট্রাম্প এবার নির্বাচিত হওয়ার পর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই জোটের জন্য আর কোন বরাদ্দ নয়। ইউরোপ তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেরাই সামলাবে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স আরও স্পষ্ট করে বলেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপ এবং আমেরিকার মধ্যে পুরানো সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে। এবং মহাদেশটিকে নিজেদের সাথে, নিজেদের সাথে মানিয়ে চলতে হবে। ভ্যান্সের বক্তব্যের বেশীরভাগ অংশ জুড়ে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের সরকারগুলোর সমালোচনা করা হয়েছে।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজৎ, ভ্যান্সের বক্তব্য প্রত্যাখান করেন। তিনি বলেন, ভ্যান্সের বক্তব্য বিদেশী হস্তক্ষেপ। শলজৎ বলেন, এই অযাচিত হস্তক্ষেপ আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে গত মঙ্গলবার সৌদিআরবে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে ইউরোপ-আমেরিকা সম্পর্ক চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। ট্রাম্প-পুতিন বৈঠককালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন দেশকে রাখা হয়নি। এমনকি রাশিয়ার যার সাথে যুদ্ধ সেইদেশ ইউক্রেনকে-ও রাখা হয়নি !

পুতিনের সাথে বৈঠকের পর ট্রাম্প, জেলেনস্কির সমালোচনা করেন। ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন অনেক আগেই একটি চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি করতে পারতো। অপরদিকে জেলেনস্কি ট্রাম্প-বৈঠকের প্রতিবাদ হিসেবে রিয়াদ সফর বাতিল করেছেন।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা নিয়েছে, নিজেরা একটা শক্তিশালী সামরিক জোট গঠন করবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের দুরে ঠেলে দেয়, তাহলে তারা নতুন উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করবে বলে আভাস দিয়েছে !

বৃটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর রাশিয়া প্রথম আমেরিকাকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯০৭ সালের ডিসেম্বরে মাসে রাশিয়া প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকাকে নতুন মার্কিন স্বীকৃতি প্রদান করে। এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর দীর্ঘ সময় দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। ১৯১৭ সালে লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর সম্পর্কে ছেদ ঘটে।

লেখক: শাহীন রাজা, হেড অব এডিটোরিয়াল, মোহনা টেলিভিশন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button