
চার্চিলের নাতি লর্ড নিকোলাস সম্প্রতি বলেন, বেলফোর ঘোষণায় বর্ণিত ফিলিস্তিনে আরবীয় সম্প্রদায়ের অধিকার সমুন্নত রাখা হয়নি। এটা স্পষ্ট বিষয়। এটা একটি ঐতিহাসিক অবিচার। এই অবিচারের দায় দায়িত্ব ব্রিটেনের ওপর এসে পড়বে।
তিনি আরও বলেন,আমরা ফিলিস্তিনিদের একই অধিকার অস্বীকার করে ইউক্রেনের জনগণের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা রক্ষা করতে পারি না।যুক্তরাজ্যকে দ্বিমুখী নয়। সমান অবস্থান বজায় রাখতে হবে। বর্তমানে ইজরাইল, আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটা দেশ ছারা গোটা বিশ্ব এই ধারণা পোষণ করে।
এদিকে গত ১৮ মাসে ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে গাজ়া ভূখণ্ডে মৃত প্যালেস্টাইনিদের সংখ্যা ৫০ হাজার পার হয়ে গেছে ! এই নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু এবং নারী। গাজায় বসবাসরত এক লক্ষের উপর ঘর ছাড়া হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ২০২৩ সালে গাজায় লোকসংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৩০ হাজার। বর্তমানে তা নেমে এসেছে বিশ লাখ দশ হাজারে। এই সংখ্যা ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উল্লেখ করেছে, ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে নৃশংস আগ্রাসন চালিয়েছে। যেখানে, সেখানে এবং আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করেছে। এমনকি মানুষ, স্কুল, হাসপাতাল, ভবন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো কোনকিছুই বাদ দেয়নি। ইসরায়েল অবিরাম বোমা বর্ষণ করেছে ! মনে হচ্ছে ইসরায়েল গাজার গোটা নাগরিক গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় ! এ যেন মানবতা ধ্বংসে টনকে টন বোমা বর্ষণ।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) গত জানুয়ারিতে রায় দিয়েছে, যে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে খ্রিষ্টীয়দের ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ইসরায়েলের গাজা অভিযান গণহত্যা কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এবং যদি তাই হয় তাহলে এব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার সকল গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে খাদ্য ও জরুরি ওষুধ ওষুধ প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছেে। সেখানকার বাসিন্দারা আটকা পড়া ফিলিস্তিনিরা, দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো বোমা দিয়ে ধ্বংস করে দেয়ায় চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বিশ্বব্যাপী পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন উল্লেখ করেছে জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশ বর্তমানে তীব্র খাদ্য সঙ্কটে আছে। খাদ্য সঙ্কটে ৩,৫০০ শিশু খাদ্যের অপুষ্টিতে ভুগছে। এছাড়া তারা আরও জানায়, স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ায় গাজায় প্রায় ৬০,০০০ গর্ভবতী মহিলাও গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে।
ইসরায়েলী আগ্রাসনে, গাজা’র নাগরিকদের যখন এমন মানবেতর অবস্থা। সেই সময় ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে বিশ্ব মোড়লেরা অস্থির ! ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটার পর একটা বৈঠক করছে। রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে তারা সামরিক সহযোগী করছে। আমেরিকার বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন শান্তিপূর্ণ সমাধানের নানামুখী পথ খুঁজছে। আমরা ইউক্রেনের-ও সমাধানের পক্ষে। তবে গাজা’য় ফিলিস্তিনী নাগরিকদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে সেই আশা করি।
বিশ্ব মোড়লেরা একচক্ষু দৈত্যের মতো যেন না হয়। শুধু ধর্ম বা বর্ণের কারণে মানবতা পাশে থাকবে। আর ভিন্ন ধর্মের জন্য ভিন্ন চিন্তা। এটা সভ্যতা নয়। এটাও সাম্প্রদায়িক মনোভাব। আরব বিশ্বের নিরবতা-ও অগ্রহণযোগ্য। এই রোমজান মাসে আরবের বিভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিকেরা যে সময় নিরাপদে ইফতার করছে। সেই সময় গাজাবাসী আতঙ্কে সময় কাটায়। এই বুঝি ইসরায়েলের যুদ্ধ বিমান থেকে শত-শত বোমা নেমে আসবে! নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে হবে !