Top Newsসংবাদ সারাদেশ

বায়স্কোপ : ২৫ মার্চ

মোহনা অনলাইন

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, ঢাকা  শহর। বিকেলের পরই এই শহর আতঙ্ক নগরী হয়ে ওঠে !  মিল ব্যারাক থেকে মীরপুর গাবতলী ব্রীজ। হাজারীবাগ এবং মহাখালী। এইসব এলাকায় মহল্লায়, মহাল্লায়, ছোট-বড় রাস্তায় এবং গলিতে গলিতে। সবখানেই জনতার উৎসুক  জটলা। সবার কথা আর চোখেমুখে একটাই আশঙ্কা  কিংবা কি হতে যাচ্ছে ? কিন্তু কেউ কিছুই জানে না। শুধু আচ করতে পারছে, কিছু একটা হতে যাচ্ছে !

রাত ন’টার পরই স্পষ্ট হতে থাকে। কি হতে যাচ্ছে। পাকিস্তানী সেনারা রাত নটার পর, এই শহরে বড় বড় রাস্তার  মোড় গুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে দেয়। তবে মাঝে রাতেই যে ব্যাপক হত্যাজজ্ঞ শুরু হতে যাচ্ছে,  এটা কেউ ভাবতেই পারেনি।

এই ঘটনার পরপরই নগরের লোকেরা পথে পথে গাছ।  ভাঙ্গা দেয়াল। আর বাস-ট্রাকের ভাঙা চাকা এবং  ইট-পাথর দিয়ে রাজপথে ব্যারিকেট দেয়।

রাত বারোটা ! অপরেশন সার্চলাইট নাম নিয়ে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যাজজ্ঞে নেমে যায় পাকিস্তানি সেনারা। গুলি আর মর্টার শেলের আওয়াজে গোটা শহর কেঁপে ওঠে। সাথে বারুদের গন্ধ। এই বারুদের ধোঁয়ার ভেতর থেকেই ঢাকা শহরের জনগণ প্রতিরোধে নেমে যায়। নিরস্ত্র জনতার প্রতিরোধ পাক হানাদার বাহিনী এবং গোটা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে !

রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ী। মিলব্যারেক পুলিশ ক্যাম্প। হাজারীবাগে পিলখানা। সেইসাথে নবাবপুর, পলাশীর মোড় এবং মিরপুর পল্লবীতে সাধারণ জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলে ।

এর মধ্যে মীরপুর পল্লবী ছিল বাঙালিদের জন্য সব থেকে অরক্ষিত। পল্লবীর চারদিকে পাকিস্তান বাহিনীর সমর্থক মোহাজের বা বিহারিদের অবস্থান। এরই মাঝে পল্লবীতে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কয়েক ঘর বাঙালি পরিবার বসবাস করে।

মধ্যরাতে আগুন আর গুলির আওয়াজে সবাই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। আশঙ্কা একটাই , চতুর্দিকে বিহারী পরিবার । কিছু সময় পরেই তাদের আশঙ্কা সত্যি হতে দেখে। অর্ধ চন্দ্রাকারে মিছিল আর ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহ্ আকবার’ শ্লোগান দিয়ে বাঙালি বসতির দিকে এগুতে থাকে।

কিন্তু না । কয়েকজন বাঙালি যুবক বন্দুক হাতে নেমে যায় !  পল্লবী আবাসিক এলাকার শেষ বাড়িটি থেকে। বন্দুক হাতে প্রতিরোধে দাঁড়িয়ে যায় !  মূহুর্তেই স্থানীয় আরো বেশ কয়েকজন যুবক তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় । মাতৃভূমি রক্ষা করতে হবে।

বিহারী এবং তাদের সহযোগী পাকিস্তানী মিলিশিয়া বাহিনী থমকে যায় । উল্টো দিক থেকেও গুলি আসছে ! এরকম কাউন্টার হবে , বিহারীরা কল্পনাও করতে পারেনি! দুই পক্ষের গুলি , পাল্টা গুলি চলছে। একসময়  বাঙালি যোদ্ধাদের গুলি ফুরিয়ে আসে। একসময় বিহারীরা বুঝে যায় যে, বাঙালীদের বন্দুকের গুলি ফুরিয়ে গেছে। মূহুর্তেই বিহারীরা দ্রুত বাঙালি এলাকা দখল নিতে সামনে বাড়তে থাকে। স্থানীয় বাঙালি পরিবারের সকলেই তাঁদের  জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে ওঠে। রজনীর শেষ পর্যায়ে হয়তো তাদের জীবনেরও সমাপ্তি ঘটবে। এই শঙ্কায় শঙ্কিত। না তা হয়নি !

এমন এক সময় ! হাজি কুদরত আলী মোল্লা তাঁর বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন। হাজি সাহেবের সাথে পনেরো ষোলোজন বন্দুকধারী ছিল। বাকিরা রাম দা এবং বল্লম হাতে এগিয়ে আসতে থাকে। হাজি কুদরত মোল্লার লোকদের মূর্হ মূর্হ গুলি আর বাঙালির পক্ষে শ্লোগান। শ্লোগানে, শ্লোগানে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। এই প্রতিরোধে পাক মিলিশিয়া এবং বিহারী সন্ত্রাসীরা পিছু হটতে থাকে। এক সময় তারা পালিয়ে বাঁচে।

মিরপুরের বীর বাঙালি  ২৫ মার্চ রাতেই পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু করেছিলেন। এবং বাঙলার আলোক সূর্যটা তাঁরা নিভতে দেয়নি।

এরকম আরো কিছু সত্য গল্প আছে। যা আমার, আপনার এবং অনেকের স্মৃতির সেলুলয়েডে আটকে আছে। আমাদের দেশ ও জাতির স্বার্থে তা প্রকাশিত হওয়া জরুরী।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
bn Bengali en English