Top Newsআন্তর্জাতিক

চালের চেয়েও ছোট পেসমেকার বানালেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা

মোহনা অনলাইন

পেসমেকার একটি ছোট্ট বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এবার বিজ্ঞানীরা একেবারেই অন্যরকম কিছু তৈরি করেছেন-এক দানা চালের চেয়েও ছোট পেসমেকার! পেসমেকারটির দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৫ মিলিমিটার, প্রস্থ ১ দশমিক ৮ মিলিমিটার এবং পুরুত্ব ১ মিলিমিটার।

আকার-আকৃতিতে নতুন পেসমেকারটি একটি চালের কনার চেয়েও ছোটো। তবে কার্যকারিতার বিবেচনায় এটি বাজারে বর্তমানে প্রচলিত যে কোনো পেসমেকারকে টেক্কা দিতে পারে।

আমাদের হৃদপিণ্ড স্বাভাবিকভাবে প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার স্পন্দিত হয়। যদি এই স্বাভাবিক গতি না থাকে তাহলে গুরুতর অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও ঘটে। যাদের স্পন্দনজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ স্বাভাবিক রাখতে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়, সেটিই পেসমেকার নামে পরিচিত।

বাজারে বর্তমানে যেসব পেসমেকার প্রচলিত, সেগুলো হৃদপিণ্ডে প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার বা সার্জারি প্রয়োজন হয়। কোনো কারণে যদি পেসমেকারের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়, তাহলে শরীর থেকে বের করার জন্যও অস্ত্রপোচার বা সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়; আর যেহেতু পেসমেকার একটি ব্যাটারিচালিত যন্ত্র, তাই ব্যাটারির মেয়াদ একসময় শেষ হয়ে যায় এবং তখন সেই ব্যাটারি রিচার্জ কিংবা নতুন ব্যাটারি স্থাপন করতে হয়। সেটিও বেশ ঝামেলাপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল ব্যাপার।

প্রচলিত পেসমেকারের সমস্যাগুলো দূর করবে নতুন প্রযুক্তি
বর্তমানে অস্থায়ী পেসমেকার বসানোর জন্য রোগীর বুকের ভেতরে তার (ওয়্যার) দিয়ে সংযুক্ত করা হয়। এই তারগুলো পরে টেনে বের করতে হয়, যা অনেক সময় হৃদপিণ্ডের টিস্যুতে ক্ষতি করে।

এই পদ্ধতির একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল নিল আর্মস্ট্রং-এর ক্ষেত্রে।চাঁদে পা রাখা প্রথম মানুষটি ২০১২ সালে তার অস্থায়ী পেসমেকার সরানোর পর অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যান।

কিন্তু নতুন ক্ষুদ্রতম পেসমেকারটি সম্পূর্ণ ওয়্যারলেস, এবং কাজ শেষ হয়ে গেলে নিজেই শরীরের মধ্যে মিশে যায়। মাত্র ১ মিলিমিটার পুরু ও ৩.৫ মিলিমিটার লম্বা এই যন্ত্রটি একটি সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো সম্ভব।

কীভাবে কাজ করে এই ক্ষুদ্র পেসমেকার?
এই অত্যাধুনিক পেসমেকার রোগীর বুকের ওপর পরিধানযোগ্য একটি নরম প্যাচের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। যদি হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়, এই প্যাচটি আলোর সংকেত পাঠিয়ে পেসমেকারকে নির্দেশ দেয় কতবার হৃদপিণ্ড স্পন্দিত হবে।

এর শক্তি আসে গ্যালভানিক সেল নামক প্রযুক্তি থেকে, যা শরীরের তরলের মাধ্যমে রাসায়নিক শক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে এবং হৃদপিণ্ডকে উদ্দীপিত করে।

পরীক্ষায় সফল, মানুষের শরীরে আসতে আর মাত্র কয়েক বছর
গবেষকরা ইতোমধ্যে এই পেসমেকারটি ইঁদুর, শূকর, কুকুর, এমনকি পরীক্ষাগারে হৃদযন্ত্রের টিস্যুর ওপর সফলভাবে পরীক্ষা করেছেন।

গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী জন রজার্স (নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র) বলেছেন, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই এটি মানবদেহে পরীক্ষা করা হতে পারে।

এমনকি তার দল ইতোমধ্যেই একটি স্টার্টআপ চালু করেছে, যার লক্ষ্য এই প্রযুক্তিকে বাস্তব চিকিৎসায় নিয়ে আসা।

শুধু হৃদরোগ নয়, বদলে দিতে পারে পুরো চিকিৎসাবিজ্ঞান
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী বোজি তিয়ান, যিনি নিজেও আলো-নিয়ন্ত্রিত পেসমেকার নিয়ে গবেষণা করেছেন, এই নতুন উদ্ভাবনকে “একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার” বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, “এটি শুধু অস্থায়ী পেসমেকারের ধারণাকেই বদলে দেবে না, বরং স্নায়ু পুনর্জন্ম, ক্ষত নিরাময় এবং স্মার্ট ইমপ্লান্টসহ চিকিৎসার অনেক ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, হৃদরোগ এখনো বিশ্বে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ।এই ক্ষুদ্রতম পেসমেকার যদি সফলভাবে মানুষের জন্য কার্যকর হয়, তাহলে এটি হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, বিশেষ করে হার্ট সার্জারির পর সুস্থ হওয়ার সময় ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

একটি ছোট্ট যন্ত্র, কিন্তু সম্ভাবনা বিশাল,এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে!

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
bn Bengali en English