
যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকের আবারও ‘ব্ল্যাক মানডে’ পরিস্থিতি উদ্ভোবের আশঙ্কা করছে ! প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর শুল্কনীতি চালু করার পর বৈশ্বিক অর্থনীতি এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখে পড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা একে ১৯৮৭ সালে উদ্ভুত ‘ব্ল্যাক মানডে’-র সঙ্গে তুলনা করছেন। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র বিজ্ঞানী এবং অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি ঘোষণা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি আবহমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাও ভেঙে যেতে পারে। করোনা পরবর্তী বিশ্ব আবার নতুন করে আরেক ধাক্কা। এবং এটা হবে পৃথিবীতে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ !
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণায় বিশ্ব অর্থনৈতিক বাজার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যায়। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাকি বিশ্বকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেওয়ার হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে !
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণায় চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক দেশের পণ্যের ওপর ২০% থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫৪% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রবল উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ঘোষণার পরপরই নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যাপক ধস নামে। মাত্র দুই দিনেই এস এন্ড পি ৫০০ সূচক ৬%, নাসডাক ৫.৮% এবং এবং ডো জোনস ৫.৫% কমে যায়। এই কারণে দুদিনে বাজার থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের উপর সম্পদ উধাও হয়ে গেছে।
এদিকে ইউরোপের বেঞ্চমার্ক স্টক্স ৬০০ সূচক ২.৫৭% কমেছে, যা জানুয়ারি থেকে তার লাভ মুছে ফেলা হয়েছে। জার্মানির ডিএএক্স সূচক ৩% কমেছে। ফ্রান্সের বেঞ্চমার্ক সূচক ৩.৩১% কমেছে, যা জুলাই ২০২৩ সালের পর একদিনে সবচেয়ে বেশি পতন। ইতালির বেঞ্চমার্ক সূচক-ও ৩.৬% কমেছে, যা মার্চ ২০২৩ সালের পর একদিনে সবচেয়ে বেশি পতন। এশিয়ায়, জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২.৭৭% এবং হংকংয়ের বেঞ্চমার্ক হ্যাং সেং সূচক ১.৫২% কমেছে। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষনার পর, বিশ্বের সকল শেয়ার বাজার এখন নিম্নমুখী !
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এবং ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষনার বিপরীতে অনেক রাষ্ট্র প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে
চীন অন্যতম। চীন প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের সকল পণ্যের ওপর ৩৪% শুল্ক আরোপ করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়া ইতিমধ্যে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ বিবেচনা করছে। এর ফলে এক ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে যা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন, ব্যবসার আস্থা এবং ভোক্তা ব্যয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে খুব শীঘ্রই।
এদিকে, মন্দার পূর্বাভাস ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যান। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার সম্ভাবনা এখন ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য “গুরুতর ঝুঁকি” তৈরি করেছে।
মার্কিন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ওলু সোনোলা বলেছেন, “অনেক” দেশ সম্ভবত মন্দার মধ্যে ডুবে যাবে। এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে পতনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোশুয়া বোল্টেন বলেছেন, শুল্ক যত বেশি সময় ধরে থাকবে তত মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি বাড়বে। আমেরিকার বাইরের দেশগুলোর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আরও তীব্র হতে পারে।
ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত
১৯৩০ সালের স্মুট-হাওলি ট্যারিফ অ্যাক্টের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি। যা বিশ্ব মন্দাকে তীব্রতর করেছিল। আজকের শুল্কনীতি যদি আরও জটিল আকার ধারণ করে, তবে একবিংশ শতাব্দীর একটি নতুন ‘ব্ল্যাক মানডে’ অপ্রত্যাশিত হবে না।