ভোলায় একের পর এক কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলছে। ইলিশা-১ নামের একটি কূপ থেকে পরীক্ষামূলক গ্যাসউত্তোলন শুরু করেছে বাপেক্স।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে এ গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হয়। বাপেক্সের
তত্ত্বাবধানে রাশিয়ান কো¤পানি গ্যাজপ্রম এই উত্তোলন কাজ করছে। এই কূপে ১৮০ থেকে ২০০ বিসিএফ
ঘনফুট গ্যাস মজুদের সম্ভাবনা দেখছে বাপেক্স। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৫ মে থেকে
আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস তুলবে তারা। এ নিয়ে জেলার মোট ৯টি কূপে গ্যাসের সন্ধান পেল বাপেক্স। ভোলার
শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ নামে আলাদা দু’টি গ্যাস ক্ষেত্রে ৯টি কূপ খনন করা হয়। এসব কূপে মোট
গ্যাস মজুদের পরিমাণ ১.৭ টিসিএফ ঘনফুট বলে নিশ্চিত করেছে বাপেক্স।
গত ৯ মার্চ ইলিশা-১ নামে এ কূপের খননকাজ শুরু করে বাপেক্সের প্রতিনিধিদল। আরো গ্যাসের সম্ভাবনা
যাচাই করতে আগামী অক্টোবর থেকে নতুন করে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করবে বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক
বিভাগ। এই বিভাগের জিএম মো: আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এখন টেস্টিং চলছে, মাটির
তিন হাজার ৪৩৩ মিটার গভীরতায় এ গ্যাসের সন্ধান মেলে। যা প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দৈনিক এই কূপে ২০ থেকে ২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। এটা একটা
স্তরে। আরো ২টা স্তরে পরীক্ষা করা হবে। সবগুলো স্তরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই বলা যাবে প্রতিদিন কত
মিলিয়ন প্রডাকশন করা যাবে।
বাপেক্সের এমডি মো: আলী বলেন, এখনো গ্যাস টেস্টিং চলছে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না এখানে ঠিক কী পরিমাণ
গ্যাস রয়েছে। কূপের আনুষঙ্গিক কাজ স¤পন্ন হলে তা বলা যাবে। তিনি বলেন, খুব শিগগির ভোলাসহ
দক্ষিণাঞ্চলের ১২ জেলায় তেল গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাপেক্স। আশা করছি ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল
পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে। বাপেক্সের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ভোলাতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক
গ্যাস রয়েছে। সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নতুন করে আরো পাঁচটি কূপ খনন করা হবে। খুব শিগগির সেটি
শুরু হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা আকতার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি ভোলার গ্যাসের
ওপর নির্ভর করে যেন এখানে শিল্প কারখানা স্থাপন করা হয়। তাহলে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। তখন নতুন
করে সম্ভাবনা তৈরি হবে। ভোলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ভোলা স্বার্থরক্ষা কমিটির সদস্যসচিব আমিতাব অপু বলেন, ভোলায় একের পর এক গ্যাস আবিষ্কৃত হলেও
জনগণ সুফল পাচ্ছে না। আমাদের দাবি ভোলার সম্পদকে কাজে লাগিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং গৃহস্থালি কাজে
ব্যবহার করা হোক। গ্যাস বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য অবিনাশ নন্দি বলেন, আমরা চাই ভোলার গ্যাস
ভোলাতে ব্যবহার হোক। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য স্থানে গেলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে তার আগে
অবশ্যই ভোলার আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।
১৯৯৪-৯৫ সালে ভোলার শাহবাজপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান মেলে। একের পর এক গ্যাসের সন্ধান মেলায়
নতুন করে উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখছেন ভোলাবাসী।