দ্বিতীয় দিনেও মিলেনি বকেয়া বেতন, থামেনি আন্দোলনও! পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে আহত ১০
আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
দ্বিতীয় দিনেও মিলেনি বকেয়া বেতন, থামেনি আন্দোলনও! পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে আহত ১০
রোববার সকালে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের কথা থাকলেও না পাওয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করলেও সন্ধ্যার দিকে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে গাজীপুরের শ্রীপুরের ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড নামক কারখানার শ্রমিকেরা। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছে। এরআগে, সকাল থেকেই শৃঙ্খলা রক্ষায় কারখানা ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে কর্তৃপক্ষ।
রোববার (১৪ মে) সকাল থেকেই কারখানার ভেতরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেন শ্রমিকরা। অনেকেই কার্ড পাঞ্চ করে কারখানার ভেতরে এবং কিছু শ্রমিক কারখানার বাইরে অবস্থান করেন।
কারখানার শ্রমিক মনির হোসেন, আলম মিয়া ও রমজান আলী জানান, ৩ মাস ধরে বেতনভাতার বকেয়ার ব্যাপারটি মালিক পক্ষকে জানানো হলেও আশ্বাস দিয়ে তা পরিশোধ করেননি। না পেয়ে শনিবার (১৩ মে) আন্দোলনে নামে ৪-৫ হাজার শ্রমিক। সেসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের মাধ্যমে শ্রমিকদের জানানো হয় যে, রোববার সকাল ১০টার দিকে মালিক নিজে এসে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার বিষয়ে সমাধান দেবেন। রোববার সকাল থেকে কর্ম বিরতি দিয়ে কারখানার ভেতর শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচী পালন করে শ্রমিকরা। পরে বিকেলের দিকে মালিক কারখানায় প্রবেশ করেন। আলোচনা চলাকালে একপর্যায়ে বাইরে আমাদের কয়েকজন শ্রমিকের সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বাকবিতন্ডা হয়। এতে পুলিশ অন্যায় ভাবে আমাদের ওপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। শ্রমিকরাও ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এতে আমাদের ৮-১০ জন শ্রমিক আহত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক কর্মকর্তা জানান, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মালিক কারখানায় এসে শ্রমিকদের ৪২ জন প্রতিনিধি নিয়ে দ্বিতীয় তলায় আলোচনায় বসে। আলোচনা শেষে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত সকল শ্রমিকদের জানানো কথা ছিল।
সরেজমিনে কারখানায় দেখা যায়, সকাল থেকে কারখানার মূল ফটকের সামনে ও সড়কের পাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছে। এদিকে পুলিশের অবস্থানের মধ্য দিয়েই কারখানার ভেতরে ও বাইরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন শ্রমিকেরা। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ১০ শ্রমিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। এ সংবাদ লিখা পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা কারখানার সামনে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল।
মনির নামের একজন কারখানার শ্রমিক বলেন,” আমাদের বেতন দিতে পারে না, কিন্তু শতাধিক পুলিশ তো ঠিকই দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আমাদের পেটে তো ভাত নেই। আমরা পুলিশকে কেন ভয় করব! আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এটা আমাদের অধিকার’। কিন্তু পুলিশ অন্যায় ভাবে আমাদের ওপর হামলা করেছে।
চিৎকার দিয়ে মুঠোফোনে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে আনিসুল নামের আরেক শ্রমিক বলেন, চাকরি করি সন্তানসহ আমরা দুমুঠো ভাতের জন্য। এখন বেতন না পেয়ে উপোস থাকলে সেই চাকরি করে লাভ কী? এখন আন্দোলন করেও হামলার শিকার হতে হচ্ছে “।এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের শ্রীপুর জোনের ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, শ্রমিকেরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে সকাল থেকে কারাখানা ভেতরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেছে। প্রশাসনের সকল পর্যায়ের প্রতিনিধি মালিকের সঙ্গে আলাপ করে শ্রমিকদের বেতন ভাতার বকেয়ার ব্যাপারটি সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
শৃঙ্খলা রক্ষা ও শ্রমিকদের বেতনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে দীর্ঘ সময় ধরে কারখানায় অবস্থান করেন শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন। তিনি মোহনা টেলিভিশনকে বলেন, উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় শ্রমিক-মালিকের মধ্যে কোনো রকম বৈরী পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রশাসন চেষ্টা করেছে। বিকেলের দিকে মালিকের সাথে শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কথা হয়েছিল। আলোচনা শেষের দিকে ঠিক এ মুহূর্তে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে মালিক পক্ষ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের গাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করলে পুলিশও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় শ্রমিকদের ইটপাটকেলে প্রশাসনের কয়েকজন আহত হয়েছেন।
গাজীপুরের এএসপি (কালিয়াকৈর সার্কেল) আজমির হোসেন মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে জানান, এখানে শিল্প পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। আমাদের কেউ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে এমন খবর আমার জানা নেই। তবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রসঙ্গত, ৩ মাসের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবীতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে কাপাসিয়া-জয়দেবপুর আঞ্চলিক সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ওই কারখানার শ্রমিকেরা। এতে ৫ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ থাকলে দাবী পূরণের আশ্বাস পেয়ে ঘরে ফিরে যায় শ্রমিকরা।