সংবাদ সারাদেশ

নারীর সঙ্গে দ্বিমুখী আচরণ বন বিভাগের

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: আলফাজ সরকার

গাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের সদর বিটের আওতায় বনের জায়গা দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণের কাজ চললেও একই দাগে ঘর তুলতে হাফিজা খাতুনের নামের এক ভুমিহীন নারীর সঙ্গে বন বিভাগ দ্বিমুখী আচরণ করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।

সোমবার (২৪ জুলাই) পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের ওই নারী সাংবাদিকদের সাথে এসব কথা বলেন।

হাফিজা খাতুন বলেন,” আমি রেললাইনের লগে এক ভাইয়ের বাড়িতে থাইক্যা একটা পোশাক কারখানায় চাকরি করতাছি। যে কয়ট্যাহা বেতন পাই তা দিয়ে টেনেটুনে পোলাপান নিয়ে চলি। পাশেই বাবার পৈতৃক ভিটায় একটা ঘর করার লাইগ্যা মালামাল আনছিলাম। দুএকবার কাজ করতে গেছি ফরেস্টো  বাঁধা দিছে। একবার তো আমগরে ধইরা অফিসে নিয়ে যাইতে লইছিল। আল্লাই বিচার করবো”।

হাফিজার ভাই কবির মিয়া বলেন,” আমরা গরীব বলে সব নিয়ম আমাদের জন্য। নাইলে লোহাগাছ মৌজার ৩৭৭ নং এসএ এর একই দাগে ১০০ ফুট দূরত্বে দু’জনের ঘর। একজন করতে অনুমতি দেওয়ায় কাজ শেষ করে ফেললো আর আমার বোনেরটা করতেই দিলো না। এটা অমানবিক।

অভিযোগ রয়েছে, শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জে মোখলেসুর রহমানের প্রশিক্ষণ জনিত ছুটিতে থাকায় বর্তমান রেঞ্জে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে রেকর্ড সংখ্যক বনভূমি বেদখল হয়েছে। তবে, তার সঠিক কোনও হিসাব স্থানীয় বন বিভাগ জানাতে পারেনি।

একটি সুত্র জানায়, শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জের অধীনে ৭টি বিট অফিস রয়েছে। এখানে বনের জমির পরিমাণ ২৪ হাজার একর। যেগুলোর মধ্যে একটা বড় অংশ প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। গত এক বছরে শ্রীপুর রেঞ্জে ৪০ হেক্টর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বনবিভাগ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্থানীয় বনমালি রফিক মিয়া শ্রীপুরের বাসিন্দা হওয়ায় সকলের পরিচিত মুখ। তাই  নিম্ন আয়ের মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করার মৌখিক অনুমতি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। বনবিভাগে নিয়মিত যোগাযোগকারী মাসুদ,আনোয়ার,রাজমিস্ত্রী হযরত আলী, কাঠ ব্যবসায়ী সজিব ও স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মীদের সহায়তায় ঐ বন মালির মাধ্যমেই  চলে  বাড়ি বানানোর মৌখিক অনুমতি বা রফাদফা  ।

নাম  প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর বিট এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত বনের জমিতে নতুন বসতবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এসব নির্মাণ কাজের সঙ্গে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। টাকা দিলে কোনো সমস্যা হয়না। কিন্তু অনেক গরীব মানুষ আছে যারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে তারা টাকা দিতে না পারলে  ঘর তুলতে দেন না।

টাকা নিয়ে ঘর নির্মাণের মৌখিক অনুমতি দেওয়ার কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বন প্রহরী (গার্ড) বলেন,”আমরা সবকিছু বলতে পারিনা। কারখানার ওয়াল কিংবা অর্থবিত্তদের সাথে লেনদেনের মাধ্যমে ঘরের অনুমতি দেন যারা ওপরের দায়িত্বে আছে। আমাদের মতো পদের লোকজন শুধু দৌড়াদৌড়ি করি। বনের জমিতে গরিব-অসহায় মানুষ বাড়ি নির্মাণ করেন। মানবিক দিক বিবেচনায় অনেক সময় কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। এছাড়াও আপনাদের সাংবাদিক ও স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও নিয়মিতই কাজের জন্য আসে।

তবে বনের ভেতর কাউকে বসবাসের অনুমতি দেননি দাবি করেন শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)) সিরাজুল ইসলাম।  তিনি বলেন, বনের জমিতে নতুন করে বসতবাড়িসহ কোনও ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। ওখানে দুইজনের ঘরই বাঁধা দেওয়া ছিল।

কেউ হয়তো ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন বলে সহকারী বন সংরক্ষক আরেফিন মুঠোফোনে জানান,

“আমি নতুন এসেছি। কয়েকদিন আগে এ বিষয়ে বলেছেন কিন্তু প্রতিদিন হাজারো অভিযোগ আসে”। এটা কোন ঘটনা সেটা স্বরণ নেই বলে রাগান্বিত হয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল করিম মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

author avatar
Editor Online
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button