বিনোদনরাজশাহীসংবাদ সারাদেশ

নওগাঁয় সাড়া ফেলেছে পরিবেশবান্ধব ‘কাঠের মাইক্রো’

মোঃ হাবিবুর রহমান

নওগাঁয় পরিবেশবান্ধব ‘কাঠের মাইক্রো’ তৈরী করে সাড়া ফেলেছেন শামসদ্দিন। দীর্ঘ ৬ মাসের প্রচেষ্টায় কাঠ দিয়ে বানানো চার চাকার একটি ‘কাঠের মাইক্রো’কে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যেই দৃষ্টিনন্দন এই গাড়িটি নিয়ে চলাচল শুরু করায় এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তিনি।

এর আগেও তিনি কাঠের তৈরি মোটরসাইকেল বানিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন এলাকায়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজ বাড়িতে বসে বসে কাঠের তৈরি ‘কাঠের মাইক্রো’ বানিয়ে নজর কেড়েছেন নওগাঁ’র শামসদ্দিন মন্ডল। সরকারি সহযোগিতা পেলে ব্যানিজিকভাবে এর প্রসার ঘটানো’র ইচ্ছা তার।

 

নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ি সরদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা শামসদ্দিন মন্ডল। বয়স পঞ্চাশ এর কোঠায়। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ভালো না হওয়ায় দ্বিতীয় শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপাড়ার সুযোগ হয় তার। দীর্ঘ ২৮ বছর যাবত কাজ করছেন কাঠ মিস্ত্রির। কাঠ দিয়ে তৈরি গাড়িটি অনেকটা ‘মাইক্রো’র আদলে তৈরি। গাড়িটির পুরো বডি কাঠের তৈরি। এটি চলছে বৈদ্যুতিক চার্জে। চালকসহ পিছনে বসার জন্য দুটি আসন রয়েছে। পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী এ গাড়িটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা।

বর্তমানে গাড়িটিতে লাগানো রয়েছে ১২০ এমপিআর একটি পুরাতন ব্যাটারি। একবার চার্জ দিলে চলছে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। তবে চারটি নতুন ব্যাটারি লাগানো গেলে এক চার্জে সারাদিন চালানো যাবে। শামসদ্দিন মন্ডল জানান- রাস্তায় বিভিন্ন যাহবাহন চলাচল করতে দেখে ভাবতেন কিভাবে নিজে গাড়ি তৈরি করবেন। এরপর একদিন শখের বসে বাজার থেকে কাঠ কিনে নিয়ে আসেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুরু করেন গাড়ি বানানোর কাজ।

 

 

৬ মাসের মধ্যে গাড়িটি বানানোর কাজ শেষ হয়। এই কাজে তাকে কেউ সহযোগিতা করেনি। গাড়িটির চাকা ও এক্সেল ছাড়া সব জায়গাতে ব্যবহার হয়েছে কাঠ। গাড়ি বানাতে খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। তবে এখনও বাকি আছে রং এর কাজ।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিনে গাড়ি নিয়ে যখন রাস্তায় বের হন তখন খুবই ভালো লাগছিলো। প্রথম দিন থেকেই এখনও গাড়িটি নিয়ে বের হলে সবাই দেখতে ভিড় করে। অনেক সময় বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে আসেন। সবাই প্রশংসা করে।
গাড়ি দেখতে এসে কেউ যেতে চায় না। গাড়ির সাথে সবাই ছবি তোলে। সরকার সহযোগিতা করলে এর চেয়ে আরও উন্নত গাড়ি বানাতে পারবেন বলে জানান তিনি।

 

পরিবেশবান্ধব এই ‘কাঠের মাইক্রো’ নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কোনো কাজে বের হলে নজর কাড়ছে পথচারিদের। এক নজর দেখার জন্য গাড়ির চারপাশে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। কেউ কেউ আবার এ গাড়িটির সাথে নিজের ছবি তুলে রাখছেন মুঠোফোনে। তারা জানান, কাঠ দিয়ে যে এত সুন্দর গাড়ি বানানো যায় এর আগে কখনোই তারা দেখননি। দেখে খুব ভালো লাগলো। তার মেধার প্রশংসা করতে হয়। এই গাড়িটি দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। দেখার মত।

 

আরেকজন বলেন, একজন কাঠ মিস্ত্রি হয়ে, সে কিভাবে এত সুন্দর গাড়ি বানালো মাথায় ধরে না। মাঝে মধ্যে গাড়িটি রাস্তায় দেখি। গাড়িটি পরিবেশ বান্ধব। সরকার থেকে তাকে সহযোগিতা করা হলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো মানের গাড়ি বানাতে পারবে।

 

এদিকে কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল জানান, নিজের প্রচেষ্টায় কাঠ দিয়ে পরিবেশ বান্ধব এমন গাড়ি তৈরি করায় আসলেই প্রশংসার দাবিদার তিনি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

পরিবেশবান্ধব এই ‘কাঠের মাইক্রো’ ব্যবহারে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হবে না ঠিক তেমনি জ্বালানী তেলের উপর চাপ কমবে বলে আশা করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button