ছাত্রলীগ নেতাদের থানায় তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনায় ইতিমধ্যে ডিএমপি’র রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশীদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মারধরে অংশ নেয়ার কারণে শাহবাগ থানার পরিদর্শক অপারেশনস মো. গোলাম মোস্তফাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটিও ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনার দিন প্রেসিডেন্টের এপিএস আজিজুল হক মামুনের ভূমিকা নিয়ে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঘটনার দিন বারডেম হাসপাতালে মামুনই প্রথম এডিসি হারুনের ওপর হামলা করে তার চশমা ভেঙে দিয়েছেন। একই কথা বলেছেন মামুনের স্ত্রী ডিএমপি’র ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তা সানজিদা আফরিন। সানজিদাকে ঘিরেই শনিবারের ওই ঘটনা ঘটে।
ডিএমপি’র পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিও এখন বারডেমের ঘটনাকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে। সূত্রগুলো বলছে, ঘটনার দিন মামুন হাসপাতালে গিয়ে তার স্ত্রী এডিসি সানজিদা আফরিন ও এডিসি হারুনকে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হন। এক পর্যায়ে এডিসি হারুনের ওপর চড়াও হন তিনি। এসময় মামুনের পক্ষ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতারাও ভূমিকা রাখেন।
পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ফেঁসে যাবেন এপিএস মামুন। এ ছাড়া থানায় তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের কারণে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত ও অপারেশন), বেশ কয়েকজন এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলও শাস্তির আওতায় আসবেন। ঘটনার দিন তারা ছাত্রলীগ নেতাদের থানার ভেতরে মারধর করেন। একাধিক সূত্র ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে ওই দিনের ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে মামুনের হাত ধরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ছাত্র জীবন থেকেই পরিচয় এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিনের। দুজনের মধ্যে তখন থেকে ঘনিষ্ঠ প্রেমের সম্পর্ক। ওই সময়ই দুজন বিয়ে করেছিলেন এমন কথাও শোনা যায়। যদিও তারা বিষয়টি অস্বীকার করছেন। পরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ও বর্তমানে প্রেসিডেন্টের এপিএস মামুনের সঙ্গে সানজিদার বিয়ে হয়। কিন্তু সংসার জীবনে এই দম্পতি সুখী ছিলেন না। ৩৩তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর ট্রেনিংয়ে থাকাকালীন সময় তিনি একই ব্যাচের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ান। বিষয়টি জানাজানির পর বিভাগীয় তদন্ত পর্যন্ত গড়ায়। ওদিকে বিয়ের পরও এডিসি হারুনের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ও কথা হতো। দুজনের চাকরির পোস্টিং ভিন্ন জায়গায় হলেও সম্পর্ক ঠিকঠাক থাকতো। হারুনের সঙ্গে স্ত্রীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে এটা আগে থেকে জানতেন এপিএস মামুন। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। মামুন স্ত্রীকে সবসময় নজরদারিতে রাখতেন। ঘটনার দিন মামুনের সোর্সই তার কাছে খবর দেয় সানজিদা বারডেম হাসপাতালে প্রবেশ করেছেন। তার কিছুক্ষণ পর সেখানে এডিসি হারুনও প্রবেশ করেন। মামুনের নির্দেশে আগে থেকে সেখানে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ছিলেন। আর তিনি সেখানে আসার সময় আরও কয়েকজনকে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। সূত্রগুলো বলছে, হাসপাতালের একটি কেবিনে হারুন ও সানজিদাকে একসঙ্গে দেখে চটে যান মামুন। পরে তিনি হারুনকে মারধর শুরু করেন। তার সঙ্গে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতারাও ছিলেন মারমুখী।
এদিকে ডিএমপি কমিশনারের গঠিত ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিকে ২ দিনের ভেতরে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কমিটি এই সময়ে তদন্ত শেষ করতে পারেনি। তাই তারা কমিশনারের কাছে আরও ৫ দিনের সময় নিয়ে আবেদন করেছে। কমিটির সদস্য ও রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ্ বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ, সাক্ষ্যগ্রহণ, জিজ্ঞাসাবাদসহ অনেক কাজ বাকি। সেজন্য তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর আবেদন করা হয়েছে।