‘আমার একটা মেয়ে আছে, ভাতুড়িয়া স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। তাকে কলেজে ভর্তি করব। আমি পঙ্গু মানুষ, ভিক্ষা করে তো খাচ্ছি না, আমি অটোরিকশা চালিয়ে আয় করে খাচ্ছি।
আমার পরিবারের মুখে ভাত তুলে দিচ্ছি, মেয়েকে কলেজে পড়াচ্ছি। এখন যদি আমাকে অটোরিকশা চালাতে বাধা দেওয়া হয় তাহলে আমার না খেয়ে মরে যাব।’
আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে ইঞ্জিনচালিত রিকশা থেকে মোটর খুলে নেওয়ার প্রতিবাদে ঘণ্টাব্যাপী মানবন্ধনে এ কথা বলছিলেন পঙ্গু রিকশাচালক হযরত আলী (৪৫)। তিনি যশোর শহরতলীর চাচড়া মধ্যেপাড়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা।
রিকশাচালক হযরত আলী বলেন, আমি আগে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতাম, একটা দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছি। নয় বছর রিকশা চালিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছি। এখন আমাদের রিকশার মোটর খুলে নিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমাদের যদি মোটর খুলে হাতেও দিয়ে দিত তাহলে আমরা মোটরটা বিক্রি করেও চাল ডাল কিনতে পারতাম।
দিঘিরপাড় রিকশাচালক শরিফ হাসান বলেন, দুই দিন আগে আমার রিকশা মোটর খুলে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে পুলিশ। আমার রিকশা এখন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আমরা এনজিও সমিতি তেকে ঋণ নিয়ে রিকশা বানিয়েছিলাম। এখন বাড়িতে সমিতির লোকজন কিস্তি নিতে হাজির হচ্ছে। আমরা খাব নাকি কিস্তি দেব। এগুলো যদি রাস্তায় চালাতে নাই দেবে তাহলে কেন মোটর বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা হলো?
মানববন্ধনে শ্রমিক নেতারা বলেন, ব্যাটারিচালিত যানবাহন আটক বন্ধ করা হোক এবং অবিলম্বে বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স প্রদান করে আমাদের সড়কে চলাচলের ব্যবস্থা করা হোক। আমাদের ট্যাক্সের টাকায় তৈরি রাস্তায় আমাদের অটোরিকশা চলবেই।
তারা বলেন, প্রশাসনের লোকজন বিভিন্ন সময়ে আমাদের মামলা দিয়ে হয়রানি করে। আমাদের অনেক পঙ্গু ভাইয়েরা ভিক্ষা না করে অটোরিকশা চালায়। তাদের আয় রোজগার বন্ধ আজ তিনদিন। অবিলম্বে সরকার অটোরিকশা চালকদের কথা বিবেচনা করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক অন্যথায় আমরা বড় আন্দোলনের ডাক দিব।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, ভ্যান অটোরিকশা ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল জলিল, শ্রমিক নেতা ইব্রাহিম খলিল, শ্রমিক নেতা হারুন অর রশিদ ফুলুসহ অনান্য নেতৃবৃন্দ ও দুশতাধিক রিকশাচালক।