বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজারে চলছে সাত দিনের পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। মেলা চলাকালে পর্যটন জোনের আবাসিক হোটেল ভাড়ায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করা হলেও কিছু তারকা হোটেল ছাড়া অন্য হোটেলগুলোতে আগের নিয়মেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পর্যটন মেলার নামে সৈকতে খুলে রাখা হয়েছে ঝুপড়ি দোকান।
তথ্য মতে, জেলা প্রশাসন ঢাকঢোল পিটিয়ে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের আয়োজন করে। কক্সবাজারকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে এ মেলার আয়োজন করা হয়। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে হোটেলগুলোতে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভাড়া ছাড় দেওয়া হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কক্সবাজারমুখী করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত আমলেই নিচ্ছে না হোটেল মালিক। উল্টো নিজেদের ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছেন তারা।
সরেজমিনে পর্যটন মেলায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু তারকা মানের হোটেল ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ভাড়া নিচ্ছে। আর সরাসরি হোটেলে যোগাযোগ করা হলে তা ৪০ শতাংশ ধরা হয়। কিন্তু নরমাল হোটেল ও গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষ অতিথিদের কাছ থেকে সময়ের চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই মেলা উপলক্ষে হোটেল ভাড়ায় ছাড় ঘোষণা পর্যটকদের সঙ্গে একটি বড় ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে মনে করছেন পর্যটকরা।
রাজশাহী থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসা শাহীন আহমেদ বলেন, কীসের ছাড়া বুঝলাম না। গাড়ি ভাড়াও কম নেয়নি। হোটেল ভাড়া তো আরও বেশি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গবেষণার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ২৭ তারিখ থেকে ৪ দিনের জন্য কক্সবাজারে এসেছি। আমাদের জন্য কয়েকটি নন তারকা হোটেলে রুম ভাড়া চাওয়া হয়েছিল। এখানে রুম ভাড়া ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ সিজনেও এই ভাড়া নেন। হোটেল কক্সবাজারে এসব হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়।
এনজিওকর্মী এনামুল হক জানান, পর্যটন মেলা উপলক্ষে আমার কয়েক বন্ধু ৩ দিনের জন্য কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। তাদের থাকার জন্য কয়েকটি হোটেলে রুম ভাড়া চেয়েছিলাম। দুই খাটের এসি রুমের ভাড়া দাবি করা হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
তিনি বলেন, ৬০ শতাংশ ছাড়ের পর যদি এই ভাড়া হয় তাহলে ওই রুমগুলোর আসল ভাড়া কত?
হোটেল বিচওয়ের ম্যানেজার মিজান বলেন, আগে যারা বুকিং দিয়েছিল তাদের কিছু ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছিল। এখন কোনো ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে না।
সিলভার বে মেরিনার ফ্রন্টের ডেস্ক কর্মকর্তা মোস্তফা বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর একদিন আমরা ডিসকাউন্ট দিয়েছি। এখন আর নেই। আমরা আমাদের নিয়মে রুম দিচ্ছি।
এদিকে শুধু ভাড়া নিয়ে প্রতারণা তা নয়, মেলার স্টল ও মঞ্চ এলাকা ছাড়া পর্যটন নগরীর কোথাও বর্ণিল সাজ নেই সৈকত কিংবা পর্যটন স্পটগুলোতে। সৈকতের সামনে ঝুপড়ির দোকান করে পর্যটন মেলার আঢোজন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর লাবনী পয়েন্ট ও সুগন্ধা পয়েন্টে সৈকত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। অথচ সেখানেই আবারো ঝুপড়ি দোকান হওয়ায় সৌন্দর্য হারিয়েছে সমুদ্রসৈকত।
জানতে চাইলে পর্যটন মেলার আহ্বায়ক ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, অভিযোগ আমাদের কাছেও আসছে। যেসব হোটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আমাদের কয়েকটি টিম তদন্তে বেরিয়েছে।