রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির ও তার চার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- মোঃ সাখাওয়াতুল কবির ওরফে আনিস ওরফে রফিক, ইহছানূর রহমান ওরফে মুরাদ ওরফে সাইফ, বখতিয়ার রহমান ওরফে নাজমুল, ইউসুফ আলী সরকার ও জাহেদুল ইসলাম ওরফে আশ্রাফ। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ২টি বিদেশী পিস্তল ও ১৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (৭ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.) সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ। আজ রবিবার (৮ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম-বার।
তিনি বলেন, আনসার আল ইসলামের প্রতিষ্ঠাকালীন নায়েবে আমির এবং বর্তমান শুরা কমিটির সদস্য শাখাওয়াতুল কবির ২০০২ সালে তার ভগ্নীপতি এজাজ কারগিলের তত্ত্বাবধানে “জামায়াতুল মুসলিমিন” নামে একটি সংগঠনে যোগ দেয়ার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ায়। তারপর থেকেই সেই সময়কার আলোচিত জঙ্গি তেহজিব করিম, শামিম, তারিক সোহেল, শামীম মাহফুজসহ অনেকের সাথে তার যোগাযোগ বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে আনসার আল ইসলামের প্রথম আমির হয় এজাজ কারগিল। সেই সময়েই সাখাওয়াতুল কবির আনসার আল ইসলামের বাংলাদেশের নায়েবে আমির হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে এজাজ কারগিল পাকিস্তানে চলে যায়। একই বছর সাখাওয়াতুল কবির এজাজ কারগিলের মাকে নিয়ে পাকিস্তানে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এজাজ কারগিল নিহত হলে শাখাওয়াতুল কবির দেশে পালিয়ে আসে। দেশে ফিরে পুনরায় সে আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। ২০১৫ সালে গ্রেফতারের পর জেলখানাতেও তার সাংগঠনিক কার্যক্রম বজায় রাখে। ২০১৮ সালে শাখাওয়াতুল কবির জামিনে মুক্তি পায়। ২০১৯ সালে আনসার আল ইসলামের শুরা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়। এই সময়েই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া নামে একটি সংগঠন পাহাড়ে তাদের অবস্থান জানান দেয়। এই নতুন সংগঠনের মূল সংগঠক ছিল শামীম মাহফুজ। শামীম মাহফুজের সাথে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে শাখাওয়াতুল কবিরকে দায়িত্ব দেয়া হয় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। শাখাওয়াতুল কবির জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার তত্ত্বাবধানে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে শামীম মাহফুজের সাথে কয়েকটি বৈঠক করেন। এছাড়াও আনসার আল ইসলাম শামীম মাহফুজকে মাসিক ভিত্তিতে যে টাকা দিতো তার দায়িত্ব ছিল শাখাওয়াতুল কবিরের।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আনসার আল ইসলামের ঢাকা অঞ্চলের আসকারি তথা সামরিক প্রধান ইহছানূর রহমান। সে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ২০২০ সালে বি.এস.সি পাশ করে। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্য হয়। তারপর সংগঠনের বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে সে ঢাকা অঞ্চলের আসকারি তথা সামরিক প্রধান হয়। সামরিক শাখায় কোন সদস্যকে নেয়া হবে কোন সদস্যকে নেয়া যাবে না, অনলাইন এবং অফলাইন দাওরা বা ট্রেনিং পরিচালনা করা, অপারেশন পরিচালনা করা করাই ছিল তার কাজ। সে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে ছিলো এবং সংগঠনের “ফুল টাইম” সদস্য।
তিনি বলেন, আনসার আল ইসলামের আনসার সদস্য বখতিয়ার রহমান মূলত একজন হোমিও চিকিৎসক। সে তার বাসায় আনসার আল ইসলামের পলাতক সদস্যদের আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করতো এবং তার বাসায় বিভিন্ন দাওরা কোর্স পরিচালনার ব্যবস্থা করতো।
তিনি আরও বলেন, আনসার আল ইসলামের গাজীপুর অঞ্চলের দাওয়া শাখার প্রধান ইউসুফ, সে ৭ম শ্রেণি থেকে ছাত্র শিবিরের সাথে যুক্ত হয় এবং ২০১৫ সালে ছাত্রশিবিরের রোকন পদপ্রার্থী ছিলো। ২০১৫ সালের শেষে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। সে গাজীপুরের আনসার আল ইসলামের দাওয়া শাখার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলো।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আনসার আল ইসলামের সাভার অঞ্চলের একটি সেলের দায়িত্ব প্রাপ্ত জাহেদুল ইসলাম পেশায় একজন হোমিও ডাক্তার এবং অতি সম্প্রতি সে আরামবাগ হাইস্কুল এন্ড কলেজে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে। সে ২০১৭ সালে আনসার আল ইসলামের সদস্য হয়। হোমিও চিকিৎসার পাশাপাশি সে আনসার আল ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, জঙ্গিরা সক্রিয় বা প্রস্তুতি নেয়ার পূর্বেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। এব্যাপারে সিটিটিসির জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে।
গ্রেফতারকৃতদের যাত্রাবাড়ী থানায় রুজুকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।