আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ানো হচ্ছে মার্কিন সেনাদের প্রতিরক্ষা,তাই ইসরায়েলের স্থল অভিযানে দেরি

মোহনা অনলাইন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় পুরোদমে স্থল হামলা চালাতে বিপুলসংখ্যক সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এরই মধ্যে উপত্যকাটিতে সীমিত পরিসরে স্থল অভিযান চালিয়েছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য গাজায় সর্বাত্মক স্থল হামলা বিলম্ব করতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের চলমান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েন করা আছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সেনাদের রক্ষায় শিগগিরই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের অনুরোধে সে সময় পর্যন্ত গাজায় সর্বাত্মক স্থল অভিযান না চালাতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেন, গাজায় ইসরায়েলের সেনারা প্রবেশ করলে তৎপর হয়ে উঠতে পারে ইরানপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করা মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা চালাতে পারে তারা। বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

নির্বিচার বিমান হামলার মধ্যে গত বুধবার উত্তর গাজায় রাতভর ট্যাংক নিয়ে অভিযান চালান ইসরায়েলের সেনারা। কয়েক ঘণ্টা পর তাঁরা আবার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ফিরে যান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষ্যমতে, এটি ছিল সর্বাত্মক স্থল অভিযানের প্রস্তুতি। ইসরায়েলের স্থল হামলা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি হামাস। তবে গোষ্ঠীটির সশস্ত্র শাখা বলেছে, মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থীশিবিরের কাছে ইসরায়েলের একটি হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে তারা।

এদিকে গাজায় ইসরায়েলের নারকীয় হামলায় দিন দিন বাড়ছে লাশের সারি, আহতদের আর্তনাদ। বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হালনাগাদ তথ্য বলেছে, উপত্যকাটিতে ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলায় ৭ হাজার ২৮ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশু ২ হাজার ৯১৩টি। নারী ১ হাজার ৭০৯ জন এবং বৃদ্ধ ৩৯৭ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৫০০ জন।

বৃহস্পতিবারও গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসসহ বিভিন্ন এলাকা তছনছ হয়েছে ইসরায়েলের বোমার আঘাতে। উপত্যকাটির প্রান্তে প্রান্তে এখন স্বজন হারানোর মাতম। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে আড়াই মাস বয়সী ছেলেকে হারিয়ে এক বাবার আহাজারি ছিল এ রকম, ‘ও কি কাউকে মেরেছে? অপহরণ করেছে? নিষ্পাপ শিশুগুলো তো বাসার মধ্যে ছিল। তাদের দোষ কী?’ ইসরায়েলের বোমার আঘাতে তাঁর স্ত্রী ও আরও তিন সন্তান মারা গেছে।

২০ দিন ধরে অবিরাম বোমাবর্ষণে গাজায় দুই লাখ আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন গাজার গণপূর্তমন্ত্রী মোহাম্মদ জিয়ারা। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি  গৃহহীন হয়েছেন। মারা গেছেন ১০১ স্বাস্থ্যকর্মী।

গাজার হাসপাতালগুলোও বেহাল। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক ইয়াসের আলী বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক মরদেহ হাসপাতালে আসছে। সেগুলো হিমঘরে রাখার জায়গা নেই। তাই মরদেহ রাখার জন্য আমরা আইসক্রিমের কারখানা থেকে ফ্রিজার নিয়ে এসেছি। যদি এই সংঘাত চলতে থাকে, তাহলে মানুষকে দাফন করার জায়গাও থাকবে না।’

শুধু হাসপাতাল নয়, সংকট গাজার সর্বত্র। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি, খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে ভীষণ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন উপত্যকাটির বাসিন্দারা। এ অবস্থার মধ্যে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছয় দিনে গাজায় ত্রাণ নিয়ে মাত্র ৭৪টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। অথচ সংঘাত শুরুর আগেই উপত্যকাটিতে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ ট্রাক ত্রাণসহায়তা যেত।

এ পরিস্থিতিতে গাজার কোনো স্থান নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক মানবিক ত্রাণসহায়তা সমন্বয়কারী লিন হেস্টিংস। আর গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে বর্বরতা আখ্যায়িত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভাও বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ নয়, গণহত্যা চলছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button