আজ শনিবার (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকার প্রবেশমুখ টঙ্গী স্টেশন,নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, গাজীপুরের চন্দ্রা, কেরানীগঞ্জের কদমতলী হাসনাবাদ ও বসিলা সেতুর সামনে একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করছে পুলিশ।
শনিবার সকাল ৬টা থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে বাসে উঠে যাত্রীদের ব্যাগ, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল,মানিবাগ তল্লাশি করছে পুলিশ। এ ছাড়াও সন্দেহজনক ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তে পুলিশ তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে যোগাযোগ করছে। এতে যাত্রীরা বিব্রত বোধ করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গী স্টেশনরোড, টঙ্গী বাজার, কলেজ গেট, কামারপাড়া মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এ ছাড়া আব্দুল্লাহপুর ও বেড়িবাঁধ এলাকায় দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
চেকপোস্টে দায়ীত্বরত টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাফায়েত হোসেন বলেন, সমাবেশ উপলক্ষে ঢাকায় কোনো নাশকতাকারী, ক্ষতিকর দ্রব্য ও বেআইনি অস্ত্র নিয়ে যাতে কোনো দুর্বৃত্ত প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য তল্লাশি ও নজরদারি করা হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকায় প্রবেশের অন্যতম প্রবেশদ্বার নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে ভোর থেকেই চলছে পুলিশের তল্লাশি। যাত্রী কিংবা পথচারীকে সন্দেহ হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাস্তায় যানবাহন চলাচল কম থাকায় জনসাধারণকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
সাইদুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ি যাব। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি পাচ্ছি না। গণপরিবহন না পেয়ে অনেককেই বাড়তি ভাড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে যেতে দেখা গেছে। এদিকে সাইনবোর্ডে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় আজ শনিবার ভোর থেকেই তল্লাশি শুরু করেছে থানা, জেলা ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ। এ সময় তারা যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির গতি রোধ করে সন্দেহভাজনদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করছে।
আজ সকালে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে গাজীপুরের দিকে ভোগড়া পর্যন্ত যানবাহন চলাচল নেই বললেই চলে। হঠাৎ দু-একটি যাত্রীবাহী বাস দেখা গেলেও সেগুলোতে তেমন যাত্রী ছিলেন না। চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের কালিয়াকৈর থানার পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ বাস থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করছেন। ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেলও তল্লাশি থেকে বাদ পড়ছে না।
নওগাঁ থেকে ঢাকার মহাখালীতে যাওয়া শাহ ফাতে আলী পরিবহনের যাত্রী আশরাফ আলী বলেন, ‘দুই দল সমাবেশ করছে। কিন্তু হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের। যানবাহন না পাওয়ায় হয়রানি পোহাতে হচ্ছে। আবার বাসে উঠেও এ পর্যন্ত কয়েকটি জায়গায় পুলিশের তল্লাশির মুখে ও জেরার মুখে পড়তে হয়েছে।’
মোটরসাইকেল নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে যাচ্ছেন সুলাইমান হোসেন। তিনি বলেন, কয়েকটি জায়গায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। মোটরসাইকেলের কাগজ দেখছে, নানা কিছু জানতে চেয়েছে তারা। মোবাইল ঘেঁটে দেখছে, কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কি না।
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল বলেন, ঢাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য তল্লাশি করা হচ্ছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের কদমতলী হাসনাবাদ ও বসিলা সেতুর সামনে ঢাকাগামী যাত্রীদের তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন । ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম জানান, বিএনপির মহাসমাবেশে যাতে কোন ধরনের বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ধ্বংসযজ্ঞ না হতে পারে সেই জন্য পুলিশ প্রশাসন, পুলিশের আইজি ডিআইজি ও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে তারা এই অভিযান চালাচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জনগণের জান-মাল রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবেন।
অপরদিকে কেরানীগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা কদমতলী হাসনাবাদ ও বসিলা সেতুর প্রবেশদ্বারে অবস্থান নিয়েছেন। কেরানীগঞ্জের আগানগর ইউনিয়নের সভাপতি মীর আসাদ হোসেন টিটু জানান বিএনপি’র লোকজন যাতে দেশটাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে না পারে সেই জন্য তারা সচেতন আছে এবং যেকোনো ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য তারা বদ্ধপরিকর।