জীবনধারা

খালি পায়ে সকালে কেন হাঁটবেন ঘাসে?

মোহনা অনলাইন

শখ করে এক-আধদিন খালি পায়ে হাঁটাহাটি করলেও নিয়মিত খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটার সময় বা সুযোগ হয় না। ঠিক ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়ুন। কাজে বেরনোর আগে নিজের জন্য মাত্র ৩০ মিনিট বের করুন। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে সামনের মাঠের উদ্দেশে। সেখানে গিয়ে জুতো খুলে সবুজ ঘাসের উপর খালি পায়ে মাত্র কয়েক মিনিট হেঁটে ফেলুন মশাই। আর এতেই হবে ম্যাজিক। বহু শারীরিক জটিলতা পিছু ছাড়বে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাঁটার মতো সহজ ব্যায়াম আর একটাও পাবেন না। তাই নিয়মিত হাঁটতেই হবে। যখনই সময় পাবেন হাঁটুন। ধীরে ধীরে কদম ফেলে এগিয়ে গেলেও উপকার পাবেন। কমবে সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরল সহ বহু ঘাতক অসুখের ঝুঁকি। তবে জুতো পরে তো এতদিন হেঁটেছেন। এখন থেকে খালি পায়ে হাঁটার চেষ্টা করুন। খালি পায়ে হাঁটলে অনেক উপকার মিলতে পারে। ঘাসের সবুজ বাগিচার উপর খালি পায়ে হাঁটলে শরীর ও মন দুইই ভালো থাকে।

তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, খালি পায়ে নিয়মিত হাঁটা অভ্যাস করলে জীবনযাপনের সঙ্গে যুক্ত বহু সমস্যাকেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

১) প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক ভাল রাখে

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিবিড়। তবে এই প্রজন্মের কর্মসংস্কৃতি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ খানিকটা কমিয়েই দিয়েছে, যা মনের জন্যে খুব একটা ভাল নয়। খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটাহাঁটি সেই সংযোগকে আবার তৈরি করে দিতে পারে।

২) অনিদ্রাজনিত সমস্যা দূর করে

রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় না বলে মুঠো মুঠো ওষুধ খাচ্ছেন? কিন্তু তাতে ওষুধের প্রতি কেবল নির্ভরতাই তৈরি হচ্ছে, অনিদ্রাজনিত সমস্যা শিকড় থেকে দূর হচ্ছে না। ঘাসের উপর খালি পায়ে প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটলে দূর হবে ঘুমের সমস্যাও।

৩) মানসিক চাপমুক্ত রাখে

বর্তমানে সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারগুলো। অথচ দিনের পর দিন ভয়াবহ ভাবে বেড়ে চলা উদ্বিগ্নতা (অ্যাংজাইটি), বিষাদ বা মানসিক অবসাদ (ডিপ্রেশন) আমাদের গ্রাস করে চলেছে। নগরজীবনে এর প্রভাব ভয়ংকর রকমের বেশি। মানসিক কষ্ট এবং অসুখগুলো আমাদের শরীরকেও অসুস্থ করে তোলে। সকালে শিশিরভেজা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। অবসাদগ্রস্ত মন নিমেষেই ভাল করে দিতে পারে এই অভ্যাস। সবুজের সমারোহ, শিশিরের ভেজা সুশীতল অনুভূতি, কোমল ঘাসের স্পর্শ এ সবকিছু আমাদের ক্লান্তি, হতাশা, অবসাদ, বিষাদ আর উদ্বেগকে ঠেলে দিতে পারে বহুদূর।

৪) শারীরবৃত্তীয় কাজ সচল রাখতে সাহায্য করে

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘাস কিংবা মাটির সঙ্গে শরীরের যোগাযোগ গোটা স্নায়ুতন্ত্রকে দেহের ঘড়ি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। রক্তচাপ থেকে শুরু করে হরমোনের ক্ষরণ— সবটাই নিয়ন্ত্রণে রাখে। পায়ের পাতায় সরাসরি ভেজা ঘাসের স্পর্শে স্নায়ুতন্ত্র খুবই উপকৃত হয়। তাপমাত্রার তারতম্যের সঙ্গে সঙ্গে হাইড্রোথেরাপির মাধ্যমে আমাদের স্নায়ুগুলো তরতাজা হয়ে ওঠে যখন আমরা ভেজা ঘাসের হিম হিম শিশিরে পা ফেলে চলি। এ ছাড়া আমাদের সেন্সরি স্নায়ুতন্ত্র জেগে ওঠে খালি পায়ে হাঁটলে। কারণ এতে প্রোপ্রিয়োসেপ্টিন জাগ্রত হয় বা যে স্থানে আমরা অবস্থান করছি তা সম্পর্কে দেহে সঠিক অনুভূতি ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়। আমাদের এই নাগরিক জীবনে বিশাল এক জনগোষ্ঠীর পায়ের পেশি, হাড় ও রক্তনালির বিভিন্ন গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এই ডিউ ওয়াকিং বা খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা খুবই উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।

৫) মন-মেজাজ ফুরফুরে রাখে

খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে এনডরফিন হরমোন ক্ষরণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এই হরমোনটি ‘হ্যাপি’ হরমোন নামে পরিচিত। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই হরমোন থাকলে মন-মেজাজ ফুরফুরে থাকে। খালি পায়ে ঘাসে হেটে ভোরের ডিউ ওয়াকিং হয়তো আমাদের অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ওষুধের ওপরে নির্ভরতা অনেক খানি কমিয়ে দিতে পারে। অন্তত মন মেজাজ সুস্থ ও ভাল রাখার কথা ভেবে যেন আমরা প্রাতর্ভ্রমণে বের হয়ে ঘাসে পা রেখে কিছুক্ষণ খালি পায়ে হাঁটি প্রতিদিন।

 

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button