অর্থনীতি

কারখানা চালাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চেয়েছে বিজিএমইএ

মোহনা অনলাইন

পোশাক শিল্পকে ঘিরে যারা চক্রান্ত করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহন এবং কারখানা চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
রোরবার রাজধানীর উত্তরায় সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, মঞ্জুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন কারখানায় ভাঙচুর করা হচ্ছে। মজুরি ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু কারখানায় অজ্ঞাতনামা কিছু লোক কারখানার ভেতরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।

তিনি বলেন,‘সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, এ শিল্পকে নিয়ে যারা চক্রান্ত করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন। সেই সাথে শিল্প-কারখানা চালানোর জন্য আমাদেরকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিন।’

ফারুক হাসান বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আমরা যখন ‘বৈশ্বিক ও আর্থিক’ দ্বিমুখী চাপের মধ্যে থেকে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছি, ঠিক তখন শিল্পকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা অপতৎপরতা। বিশেষ করে আমাদের শান্ত শ্রমিক গোষ্ঠীকে উস্কানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। কোনো কারণে এ শিল্পখাত অস্তিত্ব হারালে লাখ লাখ শ্রমিক ভাই-বোন কর্মহীন হয়ে পড়বে, যা কাম্য নয়। মনে রাখা জরুরি, কোনো কারণে এ বিশাল শ্রমগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়লে এদের জন্য যে অন্য খাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে, এরকম কোনো খাত এখন পর্যন্ত আমাদের গড়ে উঠেনি।

তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা কাজ না করলে বা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে বা কারখানা ভাঙচুর করলে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যত দিন না শ্রমিক ভাঙচুর বন্ধ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারছে, ততদিন পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ শিল্প ও সম্পদ রক্ষায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন,‘বহিরাগতদের হাত থেকে শিল্প ও সম্পদ রক্ষা করার অধিকার’ প্রত্যেক উদ্যোক্তার রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, যেহেতু বর্তমানে পোশাক খাতে অনেক কারখানায় কাজ কম, ক্রেতারা নতুন করে কার্যাদেশ দেওয়া বন্ধ রেখেছেন, সেহেতু নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে আবার নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে।

ফারুক হাসান বলেন, ব্যাংক দেনা, কার্যাদেশ বাতিল বা যেকোনো কারণে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও মালিককে মজুরি পরিশোধ করতে হয়। এখন কাজ কম থাকায় কারখানাগুলোকে নতুন নিয়োগ না দিতে বলা হয়েছে। এ মুহূর্তে নতুন নিয়োগ কারখানাগুলোর ওপর বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করবে। কোনো কারখানার কাজ বেশি থাকলে যে কারখানায় কাজ কম, সেখান থেকে কাজ করিয়ে নেবে। এতে করে কম কাজের কারখানাগুলোকে সাহায্য করা হবে এবং কারখানাগুলোর কাজের মধ্যে ভারসাম্য আসবে। যে ওভার ক্যাপাসিটি বা অতি সক্ষমতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা কিছুটা প্রশমিত হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি অভিযোগ করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তৈরি পোশাকশিল্প নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। এতে শিল্প ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম দেশদ্রোহিতার শামিল বলে আখ্যা দেন ফারুক হাসান।
শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা গত ৩১ অক্টোবর ২০২৩ অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলাম, সরকার নতুন যে বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে, আমরা পোশাক শিল্পের সব উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নেব, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক  না কেন। আমরা ঘোষিত মজুরি মেনে নিয়েছি। যত কষ্টই হোক, এই মজুরি বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্পের বাস্তবতায় এই মজুরি বাস্তবায়ন করা অনেক উদ্যোক্তার জন্যই অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হবে।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সরকার পোশাক শ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে। তবে পোশাক শ্রমিকরা মজুরি আরও বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।

ফারুক হাসান বলেন, মালিকরা নতুন ঘোষিত মজুরি মেনে নিয়েছে। শ্রমিকদের এ মজুরি মেনে নেয়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,‘আপনারা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে আপনাদের উৎপাদন বাড়ান এবং শিল্পকে টিকে থাকতে সহায়তা করুন। শিল্প ভালো থাকলে আপনারাও ভালো থাকবেন।’

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button