বেড়েছে ট্রান্সফরমার চুরি, মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ !
আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় গাজীপুরের শ্রীপুরের ২টি জেনাল অফিসের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ বেড়েছে ট্রান্সফরমার চুরি। অফিসের নিয়মে ওই লাইনে পূনরায় ট্রান্সফরমার স্থাপনে গ্রাহকেরই গুণতে হচ্ছে জরিমানা। এ নিয়ে আতঙ্কে গ্রাহকেরা। চুরি ঠেকাতে বিশেষ কেনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে। পুলিশের দাবী, রাতে টহল পুলিশ নিয়মিত মাঠে রয়েছে।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সুত্রে জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলার দুটি জোনাল অফিসের নিয়ন্ত্রণে ২হাজার ৬৪৬ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন রয়েছে। যেগুলোর আওতায় গ্রাহক রয়েছেন ১লাখ ৭৯ হাজার। সুত্র আরও জানায়, গত জুন মাস থেকে শ্রীপুর উপজেলার একটি জোনাল অফিসের আওতায় স্থাপিত লাইনের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫২টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসময় বিদ্যুতায়িত হয়ে ২ চোরও মারা যায়।
জানা যায়, ট্রান্সফরমারের ভেতরে মূল্যবান তামার কয়েলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকে বিধায় এসব ট্রান্সফরমার চুরি হয়। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়মে প্রথম বার চুরি হওয়া ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে গ্রাহককে নতুন ট্রান্সফরমারের অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। সে অনুযায়ী ১টি ট্রান্সফরমারের জন্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় বার চুরি হলে গ্রাহককে ট্রান্সফরমারের সম্পূর্ণ টাকা দিতে হয়। সে অনুযায়ী প্রায় লাখ টাকা গুনতে হবে। নিয়মিত বিল দিয়েও লাইনের এসব ত্রুটিত জরিমানা দেওয়াটা গ্রাহকের রীতিমতো মরার ওপর খাড়ার খাঁ। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে গ্রাহকদের। চুরি ঠেকাতে বিশেষ কেনো উদ্যোগ না নেওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওপর ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা। চুরি বন্ধে রাতে টহল পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনেরও দাবী তাদের।
সরেজমিনে জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন শ্রীপুর জোনাল অফিসের এরিয়া ডিরেক্টর ও ভাংনাহাটি গ্রামের এমদাদুল হকের বাড়ির সামনে থেকে ৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। বিষয়টি নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। বলেন,“সিসি ক্যামেরায় ধারণের মাধ্যমে দেখলাম, মধ্য রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঠিক ৫-৬ মিনিট পরপরই খুঁটিতে চোর উঠেছে। তাইলে পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্টদের কারো যোগসুত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এছাড়াও এমন ব্যস্ততম সড়কের চুরি হলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও দায় এড়াতে পারে না”। উজিলাব গ্রামের মনির হোসেন বলেন, “আমাদের বাড়ির পাশে ট্রান্সফরমার নিতে এসে বিদ্যুতায়িত হয়ে একজন মারা গেছেন। আমরা বিল দেই, তাইলে রাত জেগে লাইন পাহারা দিবো কেনো?। এটার দায়িত্ব তো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির”।
এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানান ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর শ্রীপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম রফিকুল আজাদ। বললেন,“দেশের এ অবস্থায় কথা বলা যাবেনা”। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আকমল হোসেন মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, “আমাদের লোকজন লাইনের নিরাপত্তায় কাজ করে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের লাইনে গভীর রাতে একটি চক্র এ কাজে জড়িত হচ্ছে। আমরা পুলিশ বাহিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আসলে চুরি ঠেকাতে গ্রাহক, সমিতি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি”।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, “অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে একজন আসামিও ধরা পড়েছে। ২জনের মৃত্যুও হয়েছে। রাত্রীকালিন সময়ে আমাদের টহল পুলিশ নিয়মিত মাঠে থাকে।”