যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের খুব সাবধানে থাকতে হয়। সামান্য এদিক–সেদিক হলেই শুরু হয়ে যায় চুলকানি, চোখ লাল, ত্বকে লালচে দানা ওঠা ইত্যাদি। অ্যালার্জি আছে এমন অনেকেরই ঘর ঝাড়ামোছা করলেই ত্বকে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। আবার কারও কারও ধুলাবালির সংস্পর্শে এলেই ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। কোনো কোনো ওষুধের অ্যালার্জিতে তো জীবন–সংশয়ও দেখা দিতে পারে।
ধুলাবালি ছাড়াও কোনো বস্তুর প্রতি অতি সংবেদনশীলতার কারণেও অ্যালার্জি হতে পারে। যেমন ধাতব অলংকার, প্রসাধনসামগ্রী, কোনো রাসায়নিক, ডিটারজেন্ট, সাবান, পারফিউম, প্লাস্টিকের তৈরি গ্লাভস বা বস্তু, গাছ, ফুলের রেণু, ওষুধ, সিনথেটিক কাপড় ইত্যাদি। এ সমস্যা জন্মগত ও পারিবারিক কারণে হতে পারে। বিশেষ বস্তুতে অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ওই বস্তুর সংস্পর্শে এলে শরীরে হিস্টামিন, সেরোটনিন ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়।
এলার্জিতে তারাই বেশি আক্রান্ত যাদের রক্তে ইওসিনোফিলের মাপ বেশি। বেশিরভাগ সময় এলার্জির ক্ষেত্রেও চুলকানিটা একটা লক্ষণ, কারণ শরীরের অ্যালার্জেনের প্রতিক্রিয়া বা বহিঃপ্রকাশ হলো ইনফ্লেমেশন অর্থাৎ জ্বালা—যেটা চুলকানির রূপে প্রকাশ পায়। এই চুলকানি শরীরে যে কোনো স্থানে হতে পারে। অনেকেই এই চুলকানির হাত থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন, স্টেরয়েড মলম, ক্যালামিন লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
তবে ঘরোয়া কিছু উপায়ে ও অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। জেনে নিন ঘরোয়া সেই উপায়গুলো-
১. আপেল সিডার ভিনেগার
ওজন হ্রাস এবং হজমজনিত সমস্যা দূর করতেই যে শুধু অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয় বিষয়টা একদমই তেমন নয়। এটি ত্বকের ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। এতে রয়েছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, যা ত্বকে চুলকানি এবং অ্যালার্জির প্রভাব কমিয়ে দেয়। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটি ব্যবহার না করাই ভালো।
যেভাবে ব্যবহার করবেন: এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এবার তুলা দিয়ে চুলকানির স্থানে মিশ্রণটি লাগান। দিনে অন্তত দুবার মিশ্রণটি লাগালে ত্বকের এলার্জি থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
২. অ্যালোভেরা জেল
ত্বকের এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা উপায় হলো অ্যালোভেরা জেল। এলার্জির কারণে যদি ত্বকের চুলকানি এবং শুকনো সমস্যা হয় তাহলে অ্যালোভেরার ঔষধি গুণ দ্রুত জ্বালা এবং চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন: একটা তাজা অ্যালোভেরা কেটে সেটি ত্বকে লাগাতে পারেন। আর যদি অ্যালোভেরা না থাকে তাহলে আপনি অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন। ৩০-৪০ মিনিট ত্বকে রেখে দিন দেখবেন চুলকানির সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।
৩. টি-ট্রি অয়েল
এলার্জি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দুর্দান্ত উপাদান টি-ট্রি অয়েল। এটি ত্বকের এলার্জিতে খুব সহায়ক। এতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিআইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যা অনেক ত্বককে এলার্জি থেকে মুক্তি দেয়। তাই ত্বকের লালচেভাব এবং চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে এটি ভালো কাজ করে।
৪. নারকেল তেল
স্কিন কেয়ারের জন্য নারকেল তেল সবচেয়ে সেরা। এতে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং যা এলার্জির ক্ষেত্রে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। এ ছাড়াও নারকেল তেল চুলকানি কমায়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন: একটি বাটিতে সামান্য নারকেল তেল নিয়ে ৫ সেকেন্ডের জন্য গরম করুন। তারপরে যেখানে এলার্জির লক্ষণ আছে সেখানে গরম তেলটি প্রয়োগ করুন। এটি এক ঘণ্টা রেখে দিন। এভাবে ৩-৪ ঘণ্টা পর পর নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের এলার্জি দূর করবে।
৫. বেকিং সোডা
ত্বকের এলার্জি দূর করতে বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন। তবে এটি ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, এটি ত্বকে পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন: প্রথমে সামান্য পানিতে এক চামচ সোডা যোগ করুন। এরপর একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন এবং এলার্জির স্থানে লাগান। ১০ মিনিটের পর ধুয়ে ফেলুন। দিনে ৩-৪ বার ব্যবহার করলে এলার্জি থেকে মুক্তি মিলতে পারে।