আধুনিক এবং সৃজনশীল মেধা বিকাশ সহায়ক শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পারবে। শিক্ষা ব্যবস্থার এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে সফলতা আসবে। কমবে আমাদের নতুন প্রজন্মে শিক্ষার্থীদের মুখস্ত পড়াশোনার চাপ। অভিভাবকেরা মুক্তি পাবে প্রাইভেট, কোচিং ও গাইড বইয়ের দৌরাত্ন থেকে।
ফরিদপুরের শিক্ষার মানউন্নয়নে নানা দিকের কথা তুলে ধরলেন শিক্ষাবান্ধব জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
১. ফরিদপুরের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রধান সমস্যাগুলো কি কি বলে আপনি মনে করেন ?
উত্তর: ফরিদপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের পথে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে যার মধ্যে আছে অবকাঠামোগত সমস্যা যেমন দুর্বল ও ব্যবহার অনুপযোগী ভবন; জমি সংক্রান্ত জটিলতা; চর এলাকা হওয়ায় শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সমস্যা রয়েছে কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে গুণগতমানের শিক্ষার অভাব। কিছু কিছু শিক্ষকরা পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ক্লাস নিয়ে থাকেন। এছাড়া পাঠদানে প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, দারিদ্রতা ফরিদপুরের বড় চ্যালেঞ্জ।
২. প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশাসন কিভাবে ভূমিকা রাখছে?
উত্তর: প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে জেলা প্রশাসন ফরিদপুর বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, শিক্ষাশুমারি ও জেলা শিক্ষা সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষার বর্তমান অবস্থান নিরূপণ ও সমস্যা সমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়মিত পরিদর্শন, সমন্বয় সভা, শিক্ষক/অভিভাবক/শিক্ষার্থী সমাবেশে উপস্থিত থেকে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. নতুন কারিকুলাম প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের কতটুকু সহায়ক হলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: নতুন কারিকুলাম প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি মাইলফলক বলে আমি মনে করি। এই কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল হতে সাহায্য করবে এবং মুখস্ত পড়াশোনা থেকে অব্যাহতি দিবে। এই শিক্ষা হবে জীবনমুখী শিক্ষা। গাইড, কোচিং, প্রাইভেট থেকে দূরে রাখবে। মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রাখবে।
৪. চর এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশাসনের বিশেষ কোনো উদ্যোগ আছে কি?
উত্তর: চর এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে জেলা প্রশাসন ফরিদপুর চর এলাকার বিদ্যালয় সমূহ পরিদর্শনপূর্বক বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করেছে এবং সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যেমন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য তিনটি উপজেলার ট্রলার প্রদান, চর এলাকার বিদ্যালয়ে ডরমেটরি স্থাপনের প্রস্তাব প্রদান, চর এলাকার শিক্ষকদের জন্য চরভাতা প্রদানের প্রস্তাব ইত্যাদি। শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সকল শিক্ষার্থীদের স্কুল পোষাক, স্কুল ব্যাগ, পানির পট, টিফিন বক্স দেয়া হয়েছে।
৫. ফরিদপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের পথে সমস্যাসমূহ সমাধানের উপায় কি?
উত্তর: প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য প্রশাসন, শিক্ষাবিভাগ এবং সচ্ছল ব্যক্তিদের একত্রে কাজ করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আয়োজন এবং সম্মেলনের মাধ্যমে নৈতিকতা ও পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশপ্রেম জাগ্রত করে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আগ্রহ তৈরী করা হয়। শিক্ষকদের যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগী করার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ।
৬. সহশিক্ষা কার্যক্রম কিভাবে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়তা করছে?
উত্তর: সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল হতে সাহায্য করে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিনোদনের সাথে শিক্ষা অর্জন করতে পারবে। সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য করে তোলে।
৭. শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে সরানোর জন্য কি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে?
উত্তর: শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে সরানোর জন্য সহশিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ভূমিকা পালন করতে পারে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন, বনভোজনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের এ সকল আসক্তি থেকে দূরে সরাতে পারে। নতুন কারিকুলামই মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রাখবে। সৃজনশীল চর্চা, ক্রীড়া, সাহিত্য, সংস্কৃতির যথাযথ চর্চা সকল অপচর্চা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখবে।
৮. প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে অভিভাবক ,শিক্ষার্থী, শিক্ষক সমাবেশ কতটা প্রয়োজনীয়?
উত্তর: প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ, শিক্ষার্থী সমাবেশ বা শিক্ষক সমাবেশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ সকল সমাবেশ থেকে প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা নিরূপণ করা যায়।
৯. অতীত থেকে বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন কি?
উত্তর: অবশ্যই অতীত থেকে বর্তমানে প্রাথমিকের শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা আগের থেকে অনেক বেশি স্মার্ট। তাদের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ভিত্তি স্থাপিত হচ্ছে।
১০. পিছিয়ে পড়া/কম বুঝতে পারা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোন উদ্যোগ আছে কিনা?
উত্তর: পিছিয়ে পড়া বা কম বুঝতে পারা শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন এর জন্য জেলা প্রশাসন ফরিদপুর কর্তৃক ভালো ফলাফল কারীদের জন্য সংবর্ধনা আয়োজন করা হয় যেমন প্রাথমিক বৃত্তি ২০২২ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা প্রদান।