গত ২৮ অক্টোবর থেকে দেড় মাসে সারাদেশের রেলপথে প্রায় অর্ধশতাধিক স্থানে নাশকতা চালিয়েছে হরতাল ও অবরোধকারীরা। এর মধ্যে রেলপথ ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, ফিশ প্লেট খুলে ফেলা ও রেললাইন কেটে ফেলাসহ একাধিক নাশকতা করেছে দুর্বৃত্তরা।
হরতাল-অবরোধকারীরা রেলকে টার্গেট করে গত ১ নভেম্বর ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে আন্তর্জাতিক এই ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনের কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এছাড়া গত ১৮ নভেম্বর মধ্যরাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনের দুটি কোচ সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। গত ২২ নভেম্বর রাতে সিলেটের উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। এতে ট্রেনের একটি কোচ পুড়ে যায়।
২৭ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে থেমে থাকা ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে চলাচল করা ঢাকা মেইল নামের ট্রেনটির ১০ সিট পুড়ে যায়। গত মঙ্গলবার ভাওয়াল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে ২০ ফুট রেললাইন কেটে ফেলা হয়। এতে মোহনগঞ্জ এক্সেপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে একজন যাত্রী নিহত ও প্রায় ১৩ যাত্রী আহত হয়েছে।
সর্বশেষ গত বুধবার নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ফিশপ্লেট, ক্লিপ খুলে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এলাকাবাসীর প্রতিরোধে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এ ঘটনায় ডোমার-চিলাহাটি রেলপথে প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী আরএনবি ও জেআরপি ছাড়াও ২৭০০ আনসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আন্তঃনগরে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হরতাল-অবরোধে ট্রেন পরিচালনার আগেই ট্রলিট্রেন পরিচালনা করাসহ একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রেলপথে নাশকতা প্রতিরোধে ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
নাশকতা প্রতিরোধে একাধিক সিদ্ধান্ত ॥ বিএনপির হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিতে সারাদেশের রেলপথ ও ট্রেনের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত আনসার নিয়োগ, স্টেশনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ট্রেন ছাড়ার আগে ট্রলিট্রেন চালানোসহ একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলপথের নিরাপত্তার জন্য সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন চলাচল মনিটরিং এবং কোনো অস্বাভাবিক ঘটনার বিষয়ে জরুরি ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাই রেললাইনের ওপর দিয়ে পথচারী চলাচল বন্ধ করা, রেললাইনের ওপর বসে আড্ডা দেওয়া বন্ধ করা, রেললাইন অতিক্রমকারী ছোট-বড় কাঁচা-পাকা অনেক সড়ক রয়েছে। এই সড়কপথে পথচারীরা রেললাইনে এসে আড্ডা দেয় বা রেললাইন ধরে চলাচল করে। দুষ্কৃতিকারীরা এ পথে বা রেললাইনের পাশে থাকা জঙ্গল হতে এসে যাতে নাশকতা করতে না পারে সে বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।