দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শেষ। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের এখন কেবল শপথ নেয়ার পালা। কিন্তু দীর্ঘ এক-দেড় মাসের নির্বাচনী লড়াইয়ে কত কিছুই না হলো। কেউ দলীয় মনোনয়ন পেলেন, কেউবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামলেন।
৩০০ সংসদীয় আসনে রাজনৈতিক দল আর স্বতন্ত্র মিলিয়ে ১ হাজার ৯৬০ জন প্রার্থী এবার ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নামেন। তবে এদের বেশিরভাগেরই নিজেদের জামানত হারিয়েছেন। সংখ্যার হিসেবে জামানত হারানো প্রার্থীর রয়েছেন প্রায় হাজার দেড়েক। যা কিনা মোট প্রার্থীর ৮০ শতাংশ। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জাতীয় ও আলোচিত নেতাও আছেন।
নির্বাচনী বিধিবিধান অনুযায়ী, আসনভিত্তিক মোট ভোটের সর্বনিম্ন সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সারা দেশের মাত্র সাড়ে ৪শর মতো প্রার্থী কাস্ট হওয়া ভোটের ১২ শতাংশ পেয়েছেন। বাকি প্রায় দেড় হাজার প্রার্থী নির্ধারিত হারে ভোট না পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
আলোচিত অনেক প্রার্থীও তাদের জামানত ধরে রাখতে পারেননি। এই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির শমসের মবিন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেরীফা কাদের, সিলেট-২ আসন থেকে বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান। রয়েছেন ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রবীণ নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর।
ঢাকা-১৮ আসনে জামানত হারানো জাতীয় পার্টির শেরীফা কাদের ভোট পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৪২৯টি। সেখানে এই আসনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরী পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৯০৯ ভোট।
সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও দলের চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট। এ আসনে জয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৪৮৮ ভোট।
সিলেট-২ আসন থেকে বর্তমান এমপি মোকাব্বির খানসহ জামানত হারিয়েছে ৫ সংসদ সদস্য প্রার্থী।
প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত হারিয়েছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহি পেয়েছেন ৯ হাজার ৯ ভোট। ওই আসনে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। মাহিয়া মাহি আট ভাগের এক ভাগেরও কম অর্থাৎ ৪.২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। জামানত হারিয়েছেন বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে নির্বাচন করা হিরো আলম।
মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ২৬৩ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন নকুল কুমার বিশ্বাস।
নওগাঁর ৫টি আসনে ২৯ প্রার্থীর মধ্যে ১৯ জন জামানত হারান। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক।
ফরিদপুরের ৪টি সংসদীয় আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন ২১ জন। এর মধ্যে কিংস পার্টি খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরসহ মোট ১৩ প্রার্থী জামানত হারানোর তালিকায় রয়েছেন।