আন্তর্জাতিক

ইরানে কারাবন্ধি দুই নারী সাংবাদিকের মুক্তি

মোহনা অনলাইন

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জিনা মাহসা আমিনীর মৃত্যু নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা প্রথম সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন নিলুফার হামেদি এবং এলাহেহ মোহাম্মদি। তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই দুই ইরানি সাংবাদিককে তাদের বিরুদ্ধে মামলার আপিল চলা অবস্থাতেই জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সঠিকভাবে হিজাব না পরার কারণে কারাগারে নেয়ার পর পুলিশী হেফাজতে মারা যান আমিনি। তার এমন মৃত্যুর বিষয় নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করা সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন হামেদী এবং মোহাম্মদী৷ কুর্দি তরুণী আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। অনেক নারী ইরান সরকারের নীতির বিরোধিতা করে হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানান। বিক্ষোভ দমনে অনেককে গ্রেপ্তার করে সরকার।

গত বছর অন্যান্য নানা অভিযোগের মধ্যে এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগও আনে ইরানের একটি আদালত। ইরানের বিচার বিভাগীয় সংবাদ সংস্থা মিজান জানিয়েছে, তাদের সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে তাদের আপিল এখন বিবেবচনাধীন রয়েছে।

হামেদি দৈনিক শার্গ পত্রিকার জন্য লিখতেন এবং মোহাম্মদী হাম-মিহান পত্রিকার জন্য সামাজিক সমস্যা এবং লিঙ্গ সমতা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতেন। ২০২৩ সালে তারা যৌথভাবে ইউনেস্কোর বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা পুরস্কারে পেয়েছিলেন। দুই সাংবাদিকের জামিনের বন্ড হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে মাথাপিছু প্রায় দুই লাখ ইউরো (প্রায় দুই কোটি টাকা)। বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে তাদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

ইরানের গড় বার্ষিক মাথাপিছু আয় চার হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৪০ হাজার টাকা)। এই হিসাবে দুই কোটি টাকা ইরানের একজন নাগরিকের জন্য প্রায় ৫০ বছরের উপার্জনের সমান। আমিনির মৃত্যুর পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের মধ্যে এই দুজনের মতো শতাধিক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দেশে এবং বিদেশে তথ্যপ্রকাশে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করেছিল ইরান।

সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আমিনির মৃত্যু হয়। এই ঘটনা দেশটিতে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। ১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের পর এটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছিল ইরানের ধর্মতান্ত্রিক সরকারের জন্য। এর পর্যায়ে রাজধানী তেহরান ছাড়িয়ে বিক্ষোভের ব্যাপক ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশজুড়ে।

ইরানের শৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপকভাবে দমন-পীড়ন চালায়, হাজার হাজার মানুষকে আটক করে। আটক হওয়াদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে বিক্ষোভের সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও।

বিক্ষোভ দমনের সময় পুলিশের হাতে অনেক মারা গেলেও ইরান কোনো হতাহতের পরিসংখ্যান দেয়নি। তবে দেশটি হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে আটকের কথা স্বীকার করেছে। ইরানের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২২ এবং ২০২৩ সালের বিক্ষোভে ক্র্যাকডাউনে অন্তত ৫২৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ১৯ হাজার জনেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button