কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে মায়ার জাল বিছানো বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি প্রয়াত চিত্রনায়ক ‘নায়ক রাজ’ রাজ্জাকের আজ ৮২তম জন্মদিন। ষাটের দশকে একটি চলচ্চিত্রে পাশ্বচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢালিউডে যাত্রা শুর করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন রাজ্জাক।
তার পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হলে পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। ১৯৪৭ সালের পর ১৯৬৪ সালে আবারও হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে নিজের ভিটে মাটি আঁকড়ে ধরে থাকলেও পিতৃমাতৃহীন আব্দুর রাজ্জাককে সেসময় ছাড়তে হয় জন্মস্থানের মায়া। চলে আসেন পূর্ববঙ্গে। রাজনৈতিক আর ধর্মীয় দাঙ্গায় পড়ে হয়তো নিজের জন্মস্থান ছেড়ে আসেন, কিন্তু নিজের ভেতর লালিত স্বপ্নটাকে ছেড়ে আসেননি রাজ্জাক।
কলেজ জীবনে ‘রতন লাল বাঙালি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে রাজ্জাকের। নায়ক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ হয় জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে। এতে তার নায়িকা সুচন্দা। তারপর থেকে একাধারে অভিনয়, প্রযোজনা ও পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এই কিংবদন্তি।
মোট ৩০০টিরও বেশি বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন নায়করাজ। তার নিজের হাতে গড়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন। ১৯৭৭ সালে ‘অনন্ত প্রেম’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি পরিচালক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। রাজ্জাক প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন।
বাবার জন্মদিন প্রসঙ্গে নায়ক রাজ রাজ্জাকের ছোট ছেলে সম্রাট বলেন, ‘সত্যি বলতে কী দিন যত যাচ্ছে জন্মদিন নিয়ে উচ্ছ্বাসটা ততই কমে যাচ্ছে। একটা সময় আব্বুর জন্মদিনে বড় পার্টি হতো। সেই সময়টা খুব উপভোগ করতাম। কিন্তু এখনতো আসলে বিশেষ দিন বলেই যে এমন নয়, আব্বুর জন্য সব সময়ই দোয়া করি। আব্বুর কবরের কাছে যাই, আজকেও যাব। আল্লাহর কাছে দোয়া করে শুধু এতটুকুই বলব- আল্লাহ যেন আমার আব্বুকে বেহেস্ত নসিব করেন। আব্বু কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে যেন তারা ক্ষমা করে দেন। শুধু দোয়া চাই সবার কাছে। জন্মদিনে কেউ বিশেষ আয়োজন করলেন কী করলেন না এসব নিয়ে আমাদের সত্যিই কোনো ভাবনা নেই।’
সেরা অভিনেতা হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নায়করাজ ২০১৫ সালে স্বাধীনতা পদক পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে ‘কার্তুজ’ চলচ্চিত্রে রাজ্জাককে শেষবার দেখা যায়।