জীবনধারা

সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং যেভাবে ক্ষতি করছে আপনার

মোহনা অনলাইন

বর্তমানে আপনার পুরো জগৎ আবদ্ধ সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার একটি প্রমাণ হল, সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল চেক করা হয়, কোথায় কী হচ্ছে, কে কী পোস্ট করছে তা নিয়ে সবসময়ই কৌতূহল।

আপনার কাছে মনে হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো আপনি হ্যান্ডেল করছেন, তবে বাস্তব সত্য হলো এই সোশ্যাল মিডিয়াই আপনাকে দিনে দিনে কাবু করছে, আপনাকে চালাচ্ছে। এতে যত বেশি সক্রিয় হচ্ছেন, ততটা বেশি আসক্ত হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য, দেখা দিচ্ছে ডিপ্রেশন, ঘুমের ব্যাঘাত, এমনকি হচ্ছেন হতাশাগ্রস্ত। আজকের বিশ্লেষণ পর্বে থাকছে সোশ্যাল মিডিয়ার বাস্তবতা।

বর্তমানে সোশ্যাল সাইটগুলো আর এর ব্যবহারের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক, ইউটিউব এই সাইট বা অ্যাপগুলোর ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি।

GLOBAL SOCIAL MEDIA STATISTICS বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪.৭০ বিলিয়ন মানুষ এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকটিভ আছেন, যা মোট বিশ্ব জনসংখ্যার ৫৯ শতাংশের সমান। সাধারণত একজন ব্যবহারকারী প্রতিদিন ২ ঘণ্টা ২৯ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেন। প্রত্যেক মাসে ৭.৪ শতাংশ প্ল্যাটফর্মগুলো ভিজিট করা হয়, যেখানে নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যা পুরুষের ন্যায় ৪৫.৭ শতাংশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই আসক্তি মস্তিষ্কে একপ্রকার হরমোন নিঃসরণ করে, যাকে বলে ডোপামিন। একটু বুঝিয়ে বলি, ফলোয়ার আর লাইক বাড়ানোর হিড়িকে আরও বেশি বেশি আকর্ষণীয় ছবি ও পোস্ট শেয়ার করছেন। যত বেশি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার হচ্ছে, তত বেশি খুশি হচ্ছেন। আর তখনই খুশিতে আপনার ডোপামিন লেভেল বেড়ে যাচ্ছে। এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতি আসক্তি তৈরি হচ্ছে।

বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে মাত্রাতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিংয়ের বেশ কিছু উদ্বেগজনক প্রভাবের প্রমাণ। এখানে কিছু সমস্যা এবং তা থেকে উত্তরণের ইঙ্গিত তুলে ধরা হলো—

হারিয়ে যাওয়ার ভয়: FOMO অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়ার ভয়, যারা ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো সাইটগুলো ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে এই ভয় বেশি সৃষ্টি হয়। তাদের মনে হয় তারা কিছু মিস করে যাচ্ছেন, একটা উদ্বেগ তৈরি হয়, এতে আরও বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ইচ্ছা জাগে। গবেষণা বলছে, এই ফোমো অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়ার ভয় কয়েক মিনিট অন্তর অন্তর আপনাকে বিভিন্ন আপডেট জানতে ফোন ব্যবহারে বাধ্য করে।

একাকিত্ব: নামে ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম’ থাকলে কী হবে, মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ে কিন্তু ব্যবহারকারী সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে পারেন বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেও পারেন। মানুষের সঙ্গে সরাসরি দেখা হওয়া কিংবা সৌহার্দ্যপূর্ণ যোগাযোগ কমে যাওয়ার ফলে একাকিত্ব, দূরে সরে যাওয়া ও বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি চরমভাবে ঘিরে ফেলতে পারে একজনকে। একটি সুস্থ সামাজিক জীবন বজায় রাখার জন্য ডিজিটাল ও অফলাইন কার্যক্রমের ভারসাম্য গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি যোগাযোগ ও কার্যকলাপ নিজের ভেতরে আনন্দ ও পরিপূর্ণতা নিয়ে আসে।

নিজেকে অবজ্ঞা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের অন্যতম একটি বিপদ হলো তুলনার ফাঁদে পড়া। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক গবেষণাপত্র প্রকাশনা সংস্থা আটলান্টিস প্রেসের প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, অনলাইনে যাঁরা তথাকথিত ‘সফল’ বা ‘আকর্ষণীয়’, তাঁদের সঙ্গে নিজেকে ক্রমাগত তুলনা করার ফলে নিজের আত্মসম্মান কমে যেতে পারে। পাশাপাশি নিজের ভেতরে অসন্তোষ বাড়তে পারে কিংবা ঈর্ষা বা বিরক্তির কারণও তৈরি হতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না যে প্রত্যেকের চলার পথ ভিন্ন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাস্তবতার প্রকৃত উপস্থাপন খুব কমই দেখা যায়। তাই নিজের পথচলা ও অর্জনকে মূল্য দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আসক্তি: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওয়েবসাইট বা অ্যাপগুলো এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে আমরা আসক্ত হতে বাধ্য। এটা অনেকটা নেশাজাত দ্রব্যের মতো। ফলে এ ক্ষেত্রে আমরা যেন পাখা গজানো পিপিলিকা আর ওসব ওয়েবসাইট আগুন! কাজেই মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের মানবিক সম্পর্ক, কমে যায় একাগ্রতা, উৎপাদনশীলতা ও ঘুম। আর এসবের ফলে সৃষ্টি হয় একটি ডোপামিন চক্র। তবে স্ক্রলিংয়ের সময়সীমা এবং উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে এই ডোপামিন চক্র ভেঙে ফেলা সম্ভব। মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ের হাত থেকে বাঁচতে সামাজিক কোনো কাজে নিজেকে যুক্ত করুন, উপকার মিলবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button