অনেক মানুষ আছে নতুন কারও সঙ্গে কথা বলতে যারা নার্ভাস বা মানসিক চাপ বোধ করে। কথায় জড়তা চলে আসে, কথা গুছিয়ে বলতে পারে না। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, বন্ধুর জন্মদিন, কারও বিবাহবার্ষিকী বা পুনর্মিলনীতে অনেক মানুষের মধ্যে কথা বলতে গেলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, গলা শুকিয়ে যায়, হাত-পা কাঁপতে থাকে, হাত ও পায়ের তালু ঘেমে যায় ও বুক ধড়ফড় করে। এই যন্ত্রণার কথা কাউকে সে বলতেও পারে না।
এই মানুষেরা যে সমস্যায় আক্রান্ত তাকে বলে সোশ্যাল ফোবিয়া বা সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার। এটি একটি মানসিক রোগ, যা যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে কিশোর বয়স বা বয়ঃসন্ধিকালে এটি বেশি দেখা যায়। কিশোরদের চেয়ে কিশোরীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
সামাজিক ভয় রোগের কারণ
১.জিনগত কারণ: শৈশব ও কৈশোরে ব্যক্তিত্বের ধরনের কারণে অনেক ছেলে-মেয়ে ভিতু ও চুপচাপ প্রকৃতির হয়। এই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অপ্রীতিকর পরিবেশ বা কারও কোনো নেতিবাচক কথায় বিব্রতকর পরিবেশ এড়ানোর প্রবণতা বেশি থাকে। ব্যক্তিত্বের ধরন থেকে পরবর্তী সময়ে সামাজিক ভয় রোগ বা সোশ্যাল ফোবিয়া হতে পারে। আত্মীয়স্বজনের কারও মধ্যে ‘সামাজিক ভয়’ রোগ থাকলে এই রোগ হওয়ায় প্রবণতা দেখা যায়।
২.পরিবেশগত কারণ: বন্ধুদের দ্বারা খারাপ আচরণ, টিটকারি, সমালোচনা বা বুলিংয়ের স্বীকার হলে পরবর্তী সময়ে সামাজিক ভয় রোগ হতে পারে।
অতিরিক্ত সোশ্যাল স্ট্যান্ডার্ড বা সামাজিক মান সবসময় মানসিক চাপ তৈরি করে, ফলে সামাজিক পরিবেশে কাজ করতে গেলে বেশি দুশ্চিন্তা তৈরি হয় এবং দুশ্চিন্তা থেকে অনেক শারিরিক ও মানসিক উপসর্গ দেখা দেয়। ভয় ও দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ধীরে ধীরে সে সামাজিক পরিবেশ এড়িয়ে চলে। এভাবে সামাজিক ভয় বা সোশ্যাল ফোবিয়া তৈরি হয়।
জাতিগত বিভেদ ও বৈষম্য, ভেদাভেদ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সামাজিক ভয় রোগের কারণ হতে পারে।
৩.মনস্তাত্ত্বিক কারণ: সামাজিক পরিবেশে নিজের কাজ অতিমাত্রায় পর্যবেক্ষণ করা, নেতিবাচক চিন্তা বারবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনে আসা ও নিজের সম্পর্কে বারবার নেতিবাচক চিন্তা করাও মানসিক চাপ বাড়ায় যা সোশ্যাল ফোবিয়ার কারণ।
সামাজিক কোনো ঘটনায় ভয় বা দুশ্চিন্তার পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা অগ্রিম ভয় সৃষ্টি করে যা শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ তৈরি করে, দেখা দেয় সোশ্যাল ফোবিয়া।
৪.স্নায়ুজনিত কারণ: জনপরিসরে কথা বলতে গেলে অ্যামিগডালা (মস্তিষ্কের যে অংশ ভয় ও দুশ্চিন্তার মতো আবেগগুলো নিয়ন্ত্রণ করে), হিপ্পোক্যাম্পাস (মস্তিষ্কের যে অংশ কিছু মনে রাখার জন্য কাজ করে) ও ইনসুলা (মস্তিষ্কের যে অংশ ব্যথা বেদনা বা অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে) বেশি উত্তেজিত হয়ে স্নায়ুজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, অপর দিকে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে (ব্যক্তিত্বের প্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ও সামাজিক আচরণের মতো ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে) প্রতিক্রিয়া কমে যায়। এপিনেফ্রিন (হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে) ও নরএপিনেফ্রিন নিউরোট্রান্সমিটার সোশ্যাল ফোবিয়ায় বেড়ে যায়। পক্ষান্তরে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করে।