আন্তর্জাতিক

ডান্সিং প্লেগ: যে রোগে নাচতে নাচতেই ঘটেছিল মৃত্যু

মোহনা অনলাইন

প্রতিনিয়ত কত ধরনেরই না ঘটনা ঘটে চলেছে এই বিশ্বে। এর মধ্যে অনেক ঘটনারই কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। যেমন বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে গেলে বিমান-জাহাজের হারিয়ে যাওয়া বা এরিয়া ৫১। স্থলভাগ সম্পর্কে অনেকটাই জানা গেলেও, সমুদ্রপৃষ্ঠের একটা বড় অংশই অজানা রয়ে গিয়েছে মানুষের কাছে। তবে শুধু কোনও জায়গা বা অঞ্চলই নয়, এমন অনেক ঘটনাও রয়েছে, যার সঠিক ব্যাখ্য়া নেই। এমনই একটি ঘটনা হল ডান্সিং প্লেগ। যেখানে নাচতে নাচতেই মারা গিয়েছিলেন শতাধিক মানুষ।

১৫১৮ সাল। ৬০০ বছর আগে বর্তমান ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গে (যদিও সেই সময় এটি একটি স্বাধীন শহর ছিল রোম সাম্রাজ্যের) এই ‘ডান্স-প্লেগ’-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল অসংখ্য মানুষের। ইতিহাসের পাতার এই ঘটনা নিয়েই রয়েছে নানা রকম তত্ত্ব। ইতিহাসবিদরাও দিয়েছেন, ভিন্ন ভিন্ন মত।

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই মাসের গরমে রাস্তায় একদিন ত্রোফিয়া বা ত্রোউফিয়া নামের একজন মহিলা নাচতে শুরু করলেন। সুস্থ মানুষ নাচতে শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই থেমে যাবার কথা। কিন্তু এই মহিলার ক্ষেত্রে তা হয়নি।তিনি নাচতে শুরু করলেন। সারা দিন পেরিয়ে গিয়েছিল তাঁর নাচ আর থামে না। সপ্তাহখানেক পরে দেখা যায়, তাঁর সঙ্গে নাচছেন আরও অসংখ্য মানুষ। কোনও ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না তাদের সেই দুর্দমনীয় নাচ।

অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন কেউ কেউ। বাকিরা ফের নাচতে শুরু করেছেন।শহরের শাসকগোষ্ঠীর ধারণা হল, এ ভাবে অবিরত বাধাহীন ভাবে নাচতে দিলে নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে নাচের ঝোঁক থেমে যাবে। বন্ধ হবে এ উন্মাদ নৃত্য। তাই তাঁরা শহরের টাউনহলে সেসব মানুষের নাচার ব্যবস্থা করে দিলেন। শহরের নামকরা গায়ক, বাদ্যযন্ত্রী, পেশাগত নাচের শিক্ষকদেরও আনা হল নাচের তাল দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।

শাসকদের নাচ বন্ধ করার এ পরিকল্পনার ফল হলো হিতে বিপরীত। এতে কমল না কারও নাচের ঝোঁক। দু-একদিনের মধ্যেই এই নাচিয়েদের মধ্য যারা দুর্বলচিত্তের মানুষ তাঁরা হার্ট ফেলিওর, সেরেব্রাল স্ট্রোক বা অবসাদের কারণে মারা যেতে থাকেন। কথিত আছে কয়েকশ জন মারা যান, যদিও সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মারা গিয়েছিলেন মাত্র ১২ জন।

ছবি সংগৃহীত

শোনা যায়, বহু দিন ধরে অন্ধকার ও বদ্ধ ঘরে জল আর পাঁউরুটি খাইয়ে রাখার পর তার পর ছেড়ে দেওয়া হয় কিছু ব্যক্তিকে। আর তার পরই এই নাচের ঝোঁক দেখা যায়। কেউ বলেছেন বিষাক্ত টারান্টুলা মাকড়শার কামড়ের ফলেই এই জাতীয় অদ্ভুত আচরণ করেছিলেন ওই সময়ের একাধিক মানুষ। তবে এই তত্ত্বও খারিজ করে দেওয়া হয়।

কেউ বলেছেন বিষাক্ত টারান্টুলা মাকড়শার কামড়ের ফলেই এই জাতীয় অদ্ভুত আচরণ করেছিলেন ওই সময়ের একাধিক মানুষ। তবে এই তত্ত্বও খারিজ করে দেওয়া হয়। এটিই ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া প্রথম এবং একমাত্র নাচের মহামারী নয়। ১৫১৮ সালের পূর্বে ‍ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ১০ বার এ মহামারীর দেখা পাওয়া গিয়েছিল।১৩৭৪ সালের দিকে এ মহামারী দেখা গিয়েছিল বর্তমান বেলজিয়াম অঞ্চলে, উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সে এবং লুক্সেমবার্গে। সম্ভবত কোন রোগাক্রান্ত শাকসবজি বা কোন মাদক দ্রব্য এই নাচিয়েরা খেয়েছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায়ই তাদের এই উন্মাদ নাচের নেশা উঠেছিল।

 

 

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button