মানব মর্যাদা ও অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এখনো বৈষম্যের শিকার। দেশে প্রকৃতপক্ষে কতজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন, তা সঠিকভাবে জানা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যার বিষয়ে একেকরকম পরিসংখ্যান দিচ্ছে। এ থেকে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশে আজ অব্দি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সনাক্তকরণ ও তার পরিসংখ্যান সঠিক ও সার্বিকভাবে হচ্ছে না।
সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনাও সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান থাকা জরুরি।
রোববার(২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আর্থসামাজিক কার্যক্রমের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তিকরণ ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ গঠনে প্রচারমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ সব কথা বলেন। ডিজএ্যাবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন এন্ড রিসার্চ এসোসিয়েশন (ডিআরআরএ) এবং প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) যৌথভাবে এ সভা আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডিআরআরএর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাবেয়া সুলতানা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ ২০২১’ এ বলা হয়, মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮ শতাংশ
প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী। আবার ‘জনশুমারি ও গৃহ গণনা ২০২২’ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী দেখানো হয়েছে। উল্লিখিত দুই জরিপে দেখা যায় যে, ২০২১ সালের তথ্য মতে মোট প্রতিবন্ধী
ব্যক্তির সংখ্যা ৪৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৪৪১জন। আবার ২০২২ এর তথ্য মতে ২৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৬০৪ জন। আবার
সমাজসেবা অধিদপ্তরের চলমান প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধী
ব্যক্তির সংখ্যা ৩৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৭২৭ জন, যারা সরকার কর্তৃক সেবা সনদ প্রাপ্তির জন্য স্বীকৃত। এতে ধারণা
করা যায় যে, বাংলাদেশে আজ অব্দি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সনাক্তকরণ ও তার পরিসংখ্যাণ সঠিক ও সার্বিকভাবে হচ্ছে
না। এজন্য সংখ্যাগত তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা বলা অনস্বীকার্য যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ধরন ও পরিসংখ্যান
সঠিকভাবে না হলে তাঁদেরকে নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা ও সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব নয়।
স্বাগত বক্তব্যে ডিআরআরএর উপদেষ্টা আখতারী আসাফ (স্বপ্না রেজা) বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকায়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যে ধরনের গমনযোগ্যতা প্রয়োজন, তা আশানুরূপভাবে
দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি । প্রতিবন্ধীবান্ধব সামাজিক চিন্তাধারা এখনও কাংক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি বলে প্রতিবন্ধী
ব্যক্তিরা মানবিক ও সামাজিক অধিকার প্রশ্নে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, অবমাননা, শোষণ, শ্লীলতাহানির ও
অধিকার বঞ্চনার শিকার হন। অথচ সুযোগ ও সুবিধা পেলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সামর্থ ও সক্ষমতা বলে জীবিকায়নে
সম্পৃক্ত হতে পারেন।
পিআইবির মহাপরিচালক জাফর আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধীদের সক্ষমতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুব উদাসীন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলা যায়, কিন্তু বাস্তবে কর্মক্ষেত্রে কেউ তাদের অধিকার দিতে চায় না।
বক্তারা জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ এর মতে, ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা
রয়েছে এবং এই ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। প্রতিবন্ধিতার ধরনগুলো হলো, অটিজম,
বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা,
দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, বাক প্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ-দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য
প্রতিবন্ধিতা । এর মধ্যে অটিজম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি হলো স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধিতা ।
ডিআরআরএ এর বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মেধা ও
সক্ষমতা এবং অনেকাংশ ক্ষেত্রে তা সুপ্তাবস্থায়।
রাজধানীর নতুনবাজার থেকে আসা অটিজমে আক্রান্ত শিহাব বলেন, আমি সবই পারি, কিন্তু আমাকে কেউ চাকরি দিচ্ছে না। আমি চাকরি চাই।
সভায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতাভিত্তিক সঠিক পরিসংখ্যান করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশে সহায়তা করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। আলোচকেরা সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়ার দাবি জানান৷