হাত নেই তবু পা দিয়েই চালান বিমান!
প্রতিভা এমন এক গুন যেখানেই থাকুক তা বিকশিত হবেই। ঠিক যেন আলোর মত। তেমনই এক প্রতিভা জেসিকা কক্স। জন্মগত দু হাত নেই তাতে কি? তবু আকাশে বিমান উড়ানোর মতো দুঃসাধ্য কাজ করছেন জেসিকা। মানুষ চাইলেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। আর সেটা করে দেখান জেসিকা। তবে তার পথটা মোটেই মসৃন ছিলনা। ১৯৮৩ সালে আমেরিকার অ্যারিজোনায় তার জন্ম।
জন্মগত দুহাত না থাকায় জেসিকার পরিবার হয়ে পড়ে বিষণ্ন। ১১ বছর বয়সে কৃত্রিম হাত লাগিয়ে দিয়েছিলো তার বাবা মা। কিন্তু এই কৃত্রিম হাতটিকে মেনে নিতে পারেনি জেসিকা। ১৪ বছর বয়সে কৃত্রিম হাত দুটো খুলে প্রথম ডানা মেলে উড়বার প্রয়াস শুরু করেন জেসিকা কক্স।
দুই ভাই-বোনের মাঝে জেসিকাও বেড়ে ওঠেন স্বাভাবিকভাবে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জেসিকার বাবা ও মা তাকে সাধারণ বাচ্চাদের স্কুলে পাঠান এবং সাধারণ সবার মতোই জেসিকাও বেড়ে ওঠেন সবার মাঝে।
জেসিকার সুলভ আচরণের মাঝে ছিল প্রচন্ড রাগ আর জেদ। প্রতিবাদী জেসিকা চিৎকার করে পা ছোড়াছুড়ি করতেন তাদের প্রতি, যারা তাকে কটু কথায় আহত করার চেষ্টা করত।
এই রাগারাগির মাঝেও জেসিকার বাবা-মা একটি প্রতিভাবান নারীকে আবিষ্কার করেন এবং তার ভাই-বোনদের সঙ্গে ভর্তি করিয়ে দেন মার্শাল আর্ট স্কুলে। হাতবিহীন জেসিকা স্কুলে প্রতিটি খেলায় অংশ গ্রহণ করত, ট্যাপ ডান্স ও গার্লস স্কুলে সাঁতারও শিখত।
সেই মেয়েটি যখন মার্শাল আর্টে ভর্তি হলো বলাই বাহুল্য ভিতরে পুষে থাকা ক্ষোভ বেরিয়ে আসে এক পারদর্শী মার্শাল আর্ট চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তায়কোয়ান্দোতে ব্লাক বেল্ট অর্জন করে, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখান প্রথম হাতহীন ব্যক্তি হিসাবে।এ ছাড়াও জেসিকা কক্স একজন লাইসেন্স প্রাপ্ত গাড়ি চালক, যিনি দুইপা দিয়ে গাড়ি নির্বিকারে চালাতে পারেন।প্যাট্রিক ছেইম্বালেনের সাথে ২০১২ সালে বিয়ে হয় জেসিকার যেই বিয়েতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কিছু মানুষ যাদের হাত নেই।
২০১৫ সাল, জেসিকার ডানা মেলার সময় হয়ে এসেছিল। আমেরিকার রোটারি ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে একটি প্রশ্ন বদলে দেয় জেসিকার জীবন, প্রশ্নটি ছিল তুমি প্লেন চালাতে চাও? জেসিকা হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ান। জেসিকাকে সব সময় সাহস যুগিয়েছেন তার বাবা। মেয়ের ইচ্ছে পূরণে এবারও তিনি পিছপা হননি।
জেসিকা প্লেনে উঠতে ভয় পায় জেনেও তার বাবা যুদ্ধ পাইলট ও রাইট ফ্লাইট নামের টুসন বেসড সংগঠনের মালিককে বলেছিলেন আমার মেয়ে প্লেন চালাতে খুবই আগ্রহী। মনের জোর কতটা দৃঢ় তার প্রমাণ জেসিকা দিয়েছিল প্লেন চালানোটাকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে।
অবশেষে নিজ শ্রম ও ধৈর্য বলে তিনি শেষ করতে পেরেছিলেন এই কঠিন অর্জন। তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মাত্র ৩৫ বছর বয়সে একজন যুদ্ধ বিমান চালক হয়ে জেসিকা কক্স আবারো ইতিহাস রচনা করেন এবং গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখান প্রথম হাতহীন পাইলট হিসেবে।