একটি সাধারণ মানসিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা ডিপ্রেশন। প্রায়ই উদ্বেগের পাশাপাশি এটি বিকাশ লাভ করে। ডিপ্রেশন হালকা-স্বল্পস্থায়ী এবং গুরুতর-দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কেউ একবার ডিপ্রেশনে পড়েন। কারো ক্ষেত্রে এটি বারবার ফিরে আসে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী ডিপ্রেশনকে কয়েকটি বিষয় দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- দুঃখ, আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে ফেলা, অপরাধবোধ, নিজেকে মূল্যহীন লাগা, ঘুম ও ক্ষুধায় বিরক্তি, ক্লান্তি, দুর্বল মনোযোগ।
একেক মানুষের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনের কারণ একেকরকম। জৈবিক কিংবা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে এটি হতে পারে। ডিপ্রেশনের প্রচলিত কিছু কারণ সম্পর্কে চলুন জানা যাক-
মস্তিষ্কের রসায়ন: আমাদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ মন-মেজাজ, চিন্তা-ভাবনা, ঘুম, ব্যবহার ইত্যাদি পরিচালনা করে। এই অংশে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তন: ডিপ্রেশনের জন্য দায়ী হতে পারে হরমোনও। এই যেমন নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব, প্রসব পরবর্তী ঋতুস্রাব, পেরিমেনোপজ বা মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের পরিবর্তন হয়। এটি ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
শারীরিক অসুস্থতা: অনিদ্রা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ক্যানসারের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ব্যথা বা পীড়া: এই ব্যথা হতে পারে শরীরের কিংবা মনের। যারা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক বা শারীরিক ব্যথা অনুভব করেন তাদের মন বিষণ্ণ থাকে। এমন ব্যক্তিদের ডিপ্রেশন হওয়ার আশঙ্কা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
পারিবারিক ইতিহাস: ডিপ্রেশনের সঙ্গে জিনের সরাসরি কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের কারো ডিপ্রেশন থাকলে এই রোগ হতে পারে।
শৈশবের ট্রমা (মানসিক আঘাত): সবার শৈশব রঙিন হয় না। অনেকের জীবনেই ছেলেবেলার এমন কোনো স্মৃতি থাকে যা মনে ভয় কিংবা মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। যা থেকে দেখা দিতে পারে ডিপ্রেশন।
আর্থসামাজিক অবস্থা: আর্থিক সমস্যা, নিম্ন সামাজিক অবস্থান, অর্থের কারণে সংসারে অশান্তি ইত্যাদি ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ভিটামিন ডি’র অভাব: অনেকসময় ভিটামিন ডি-এর অভাব ডিপ্রেশনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
ওষুধ সেবন: বিভিন্ন ওষুধ ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, কর্টিকোস্টেরয়েড এবং বিটা ব্লকার-সহ কিছু ওষুধ।
দীর্ঘস্থায়ী রোগ: দেহের দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। সমীক্ষা অনুযায়ী, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডিপ্রেশনের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণ ব্যক্তিদের প্রায় দ্বিগুণ হয়। অন্যদিকে ক্যানসারে আক্রান্ত প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন ডিপ্রেশনে ভোগার আশঙ্কা থাকে।
কে কেন ডিপ্রেশনে ভোগেন তা বলা মুশকিল। তবে জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললে সচেতন হোন। মনের কথা শুনুন। শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো রাখতে চেষ্টা করুন। ডিপ্রেশন লজ্জা বা লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। এটি এড়ানোও উচিত নয়। কাছের মানুষ বা পরিবারের ভরসাযোগ্য মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলর বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।