বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকায় তেল-গ্যাসের অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে (আইওসি) আমন্ত্রণ জানিয়ে দরপত্রের আহ্বান করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর পর সমুদ্রবক্ষের গ্যাস উত্তোলনে নড়েচড়ে বসলো বাংলাদেশ।
দেশে গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যমান তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎসহ জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকার এবার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক সীমানা-বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর এবারই প্রথম সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এই বৃহৎ উদ্যোগ নিলো সরকার।
গ্যাস ও খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিবেচনায় দেশের স্থলভাগকে ২২টি এবং সমুদ্র ভাগকে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। সমুদ্রের ২৬টির মধ্যে ১১টি ব্লক অগভীর এবং বাকি ১৫টির অবস্থান গভীর সমুদ্রে। এসব স্থানে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সক্ষমতা নেই বাংলাদেশের। এখন পর্যন্ত সমুদ্রের মাত্র ২টি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতীয় ২টি কোম্পানি। চলতি বছর তাদের জরিপের ফল জানা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারত ও মিয়ানমার দুটি দেশই বর্তমানে সমুদ্র থেকে তেল-গ্যাস উত্তোলন করছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেও তা না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সে জন্য সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের নিমিত্ত প্রণীত খসড়া ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্টাক (পিএসসি)-২০২৩’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী মার্চে আহ্বান করা হবে আন্তর্জাতিক দরপত্র। মুষ্টিমেয় কয়েকটি কোম্পানি বা এককভাবে কোনো দেশকে নয়, বরং বড় অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ কোম্পানিগুলোকে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হবে রোড শো-এর।
তবে যে দেশ বা বড় কোম্পানির সঙ্গেই চুক্তি সম্পাদন করা হোক না কেন, তাতে যেন শতভাগ দেশের স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকে, তা বজায় রাখতে হবে সর্বোচ্চ বিবেচনায়। এর জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠনের কাজও চলছে। মোটকথা, দরপত্রে অংশগ্রহণ এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়টি অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক এবং ‘কমপিটিটিভ বিডিং’ হওয়া চাই।
প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে বিশ্বের অনেক দেশই টেকসই উন্নয়ন কর্মসূূচির মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রপ্তানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র সম্পদ আহরণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
সাগরে বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি ও মজুতের সমূহ সম্ভাবনা আগামী শতকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সামগ্রিক চাহিদা ও নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।