বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

লাল মাটির জগৎ

মোহনা অনলাইন

সূর্য থেকে দূরত্ব হিসেবে মঙ্গল গ্রহের অবস্থান চার নম্বর। সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যের আলোর প্রতিফলনে উজ্জ্বল হয়। যে গ্রহে যত বেশি সূর্যালোক পড়ে সে গ্রহ তত বেশি উজ্জ্বল। মঙ্গলকে লাল দেখায় বলেই গ্রহটির নাম হয়েছে লাল গ্রহ। এমন রঙের জন্যই প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা যুদ্ধের দেবতার সঙ্গে মিলিয়ে গ্রহটির নাম রেখেছিল ‘মার্স’। 

বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বলে বুধকে সৌরজগতের উজ্জ্বল গ্রহ বলা হয়। এর এক অংশ সূর্যের দিকে অন্য অংশ সবসময় সূর্যের আড়ালে থাকে। মনে করা হয় বুধ গ্রহে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। এর পরই শুক্রের অবস্থান। পৃথিবীর খুব কাছে থাকায় শুক্র গ্রহকে আমরা সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশে সন্ধ্যা তারা আর ভোরে পূর্বাকাশে শুকতারা হিসেবে দেখি। এরপরই পৃথিবীর অবস্থান। পৃথিবীর পর মঙ্গল গ্রহের অবস্থান। পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব ৭.৮ কোটি কিলোমিটার আর সূর্য থেকে ২২.৮ কোটি কিলোমিটার। একে মাঝে মাঝে আকাশে দেখা যায়। উজ্জ্বলতার দিক থেকে শুক্রের পরই মঙ্গলের অবস্থান। মঙ্গল গ্রহ লালচে কমলার মতো বলে সহজেই দৃষ্ট আকর্ষণ করতে পারে। অনেকে একে লাল গ্রহ বলে।

মঙ্গলে ৬৮৭ দিনে এক বছর পূর্ণ হয়। মানে সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে এ সময় লাগে। তবে নিজ অক্ষে ২৪ ঘণ্টাতেই ঘূর্ণন পুরো করে। মঙ্গলের ব্যাস ৬,৭৯২ কিলোমিটার (৪,২২১ মাইল)। অর্থাৎ আকারে মঙ্গল পৃথিবীর চেয়ে ছোট। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক। তবে সৌরজগতের সবচেয়ে বড় পর্বত অলিম্পাস মনস আগ্নেয়গিরির অবস্থান মঙ্গলেই। এর উচ্চতা ২২,০০০ মিটার (৭০,০০০ ফুট) উঁচু।

মঙ্গলে স্তরময় পোলার ক্যাপ রয়েছে যেগুলো সিক্ত বরফ ও শুকনো বরফের (কার্বন-ডাই-অক্সাইড) তৈরি।

বসন্তকালে সূর্যের আলো মঙ্গলে পড়লে এসব বরফ গলা শুরু হয়। রাতে শীতল পরিবেশে মঙ্গল-পৃষ্ঠে তৈরি হয় তুষার। রাতে তুষারপাত হলেও দিনের আলো ফোটার সাথে সাথে তা অদৃশ্য হয়ে যায়। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল হালকা। বাতাসে ধুলোবালির রাজত্ব চোখে পড়ার মতো। এই ধুলোকণা পুরো গ্রহকে ঘিরে ফেলে। ভয়ানক ধুলিঝড়ে আচ্ছন্ন থাকে গ্রহটি। জায়গায় জায়গায়, পানির ছোট ছোট বিন্দুকণা খাড়া পর্বতমুখ থেকে পৃষ্ঠে নেমে আসে।

৪০০ কোটি বছর আগেও মঙ্গল গ্রহ ছিল পানিতে পূর্ণ এক গ্রহ। কিছু উল্কা গর্তের মধ্যে হ্রদ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সে পানি কমে গিয়েছে। মঙ্গলের পরিস্থিতিতেও কেবল ‘পানি’ এই গ্রহে প্রাণীর আবাস গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রাঙিয়ে তুলেছে বহুমাত্রায়। হয়তো সেখানে অন্যজগতের কেউ বাস করা শুরুও করে দিয়েছে!

মঙ্গলের ইংরেজি নাম ‘মার্স – Mars’। শব্দটি এসেছে রোমান পুরাণের যুদ্ধদেবতা মার্সের নাম থেকে। মঙ্গলের দুর্বল চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে। তবে পুরানো শিলাগুলোই চৌম্বকত্বের জন্য দায়ী। ধারণা করা হয়, অতীতে শক্তিশালী ছিল এর চৌম্বকক্ষেত্র। সাধারণত একটা গ্রহের চৌম্বকক্ষেত্রের কারণ তার তরল আয়রনের কোরের সঞ্চালন। বৈশ্বিক বিপর্যয়ে মঙ্গল শুকিয়ে তার সেই ক্ষমতা হারিয়েছে। মঙ্গলে বিপর্যয় চৌম্বকক্ষেত্রে ক্ষতির কারণে শুরু হয়েছিল। ছোট আয়রন কোর জমে গিয়ে সৌরবায়ুকে প্রবেশে সুবিধা করে দেয়। ফলে ক্ষয় আটকানোর মতো কিছু থাকে না।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button