গাজায় আবারও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চেয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, হামলা চালিয়ে ও অবরোধ দিয়ে ফিলিস্তিনিদের সম্মিলিতভাবে যে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
রোববার (২৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তোনিও গুতেরেস শনিবার মিসর-গাজার মধ্যে অবস্থিত রাফাহ ক্রসিংয়ের মিসরীয় অংশে সফরে যান। আর সেখানেই গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে আহ্বান জানান জাতিসংঘের এই মহাসচিব।
রাফাহ ক্রসিংয়ের মিসরীয় দিক থেকে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ‘বন্দুকগুলোকে নীরব করার সময় এসেছে।’
এসময় গাজা ভূখণ্ডজুড়ে মানবিক পণ্যের ‘সম্পূর্ণ, নিরবচ্ছিন্ন’ প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্যও ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান গুতেরেস।
বিবিসি বলছে, চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজার ১১ লাখ মানুষ বিপর্যয়কর ক্ষুধা ও অনাহারের সাথে লড়াই করছে। এমনকি এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আগামী মে মাসের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলেও এতে জানানো হয়েছে।
মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘জীবন রক্ষাকারী সাহায্য দিয়ে গাজাকে সত্যিকার অর্থে প্লাবিত করার সময় এসেছে। পরিস্থিতি পরিষ্কার: হয় মানবিক সহায়তার সরবরাহ বাড়াতে হবে বা না হয় মানুষকে অনাহারে থাকতে হবে। সীমান্তের মিসরীয় অংশে ত্রাণবাহী ট্রাক অবরুদ্ধ করে রাখা নৈতিক নারকীয়তা।’
এসময় গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তির আহ্বানও জানান গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘আমি চাই গাজার ফিলিস্তিনিরা জানুক: আপনারা একা নন। এই ভূখণ্ডে যে ভয়াবহতা হচ্ছে, তা দেখে সারা বিশ্বের মানুষ ক্ষুব্ধ। গাজার ফিলিস্তিনিরা একটি বিরতিহীন দুঃস্বপ্নের মধ্যে আটকে আছেন।’
পরে বিবিসির মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদদাতা হুগো বাচেগার সঙ্গে কথা বলার সময় আন্তোনিও গুতেরেস ইসরায়েলকে সাহায্য বিতরণে বাধাগুলো তুলে নেওয়ার জন্য আবারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এটা সুস্পষ্ট যে, এই বাধাগুলো গাজার এই যুদ্ধ যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে তারই অংশ।’
এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে গুতেরেসকে পাল্টা আঘাত করেছেন। তিনি বলেছেন, হামাস যোদ্ধাদের নিন্দা না করে জাতিসংঘের প্রধান গাজার মানবিক পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন।
রাফাহ ক্রসিং হলো গাজায় সাহায্যের প্রবেশের অন্যতম প্রধান পয়েন্ট। সেখানে সাহায্যবাহী গাড়িসহ বহু ট্রাকের দীর্ঘ সারি ইসরায়েলি অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছে। পশ্চিমা বহু দেশ এবং সাহায্য গোষ্ঠীগুলো এই পরিদর্শন প্রক্রিয়ার জন্য ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে।
একইসঙ্গে গাজায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সাহায্যের প্রবেশকে ধীর করার জন্যও ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তারা।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।