যৌনকর্মী মায়েদের পেশার কারণে তাদের শিশুরা যৌন নির্যাতন বিশেষত বাণিজ্যিক যৌন শোষণের চরম ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। এই ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য শিশু যৌন নির্যাতন ও বাণিজ্যিক যৌন শোষণ প্রতিরোধে যৌন কর্মী মা ও তাদের শিশুদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে দুটি মডিউল।
এই মডিউলগুলোতে খেলা, রোল প্লে, ঘটনা, অংশগ্রহণমূলক আলোচনা এবং দলীয় কাজের মাধ্যমে যৌন কর্মী মা ও শিশুদের সচেতন করতে বিভিন্ন পদ্ধতি যুক্ত করা হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের উদ্যোগে শনিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে ‘মডিউলের আনুষ্ঠানিক ব্যবহার যাত্রা’ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, অনেকেই যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করে নিজেদের সন্তান, পরিবারের সদস্যদের ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করেন। তারা যদি তাদের কথাগুলো সামনে এসে বলে তবে যৌনকর্মীদের নিয়ে প্রচলিত অনেক ধারণা বদলে যাবে। এক বোন হয়তো যৌনকর্মে লিপ্ত থেকে কাজ করে ভাইকে পড়িয়েছেন। মা হয়তো সন্তানকে পড়িয়েছেন। তারা তাদের পরিচয় গোপন রাখেন। সেই স্পর্শকাতর জায়গাগুলো বের করতে হবে। সেখান থেকে অন্য যৌনকর্মীরা শিক্ষা নিতে পারবে।
অনুষ্ঠানে ধারণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক যৌনকর্মীদের মধ্যে ২৭ শতাংশ নারী পাচারের পর যৌন কর্মে প্রবেশ করে। ১২ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু যৌনকর্মী মানব পাচারের শিকার হয়ে যৌন কাজে জড়িত হতে বাধ্য হয়। শিশুদের যৌন কাজে যুক্ত হওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে পাচার। বাংলাদেশে আনুমানিক ২৯ হাজার শিশু বাণিজ্যিক যৌন শোষণের শিকার।
বাংলাদেশে বিদ্যমান যৌনপল্লীগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুরা তাদের মায়েদের সঙ্গে বসবাস করতে বাধ্য হয়। রাজধানীতে ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা অনিশ্চিত। এই যৌনকর্মীদের সন্তান এবং রাস্তায় ও যৌনপল্লীতে থাকা অধিকাংশ শিশু এইডসসহ মারাত্নক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের পরিচালক (প্রোগ্রাম এন্ড প্ল্যানিং) জানান, মডিউলের বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যৌনকর্মী মায়েদের জন্য যৌনকর্ম পেশার বর্তমান পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট; আবাসনে ও
কর্মক্ষেত্রে যৌনকর্মী ও তাদের শিশুদের ঝুঁকি, প্রজনন স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, অধিকার, যৌন নির্যাতন ও বাণিজ্যিক যৌন শোষণ প্রতিরোধ ও আইনি সুরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা; ইতিবাচক অভিভাবকত্ব, বাণিজ্যিক যৌন শোষণ প্রতিরোধে জীবন দক্ষতা, বিকল্প জীবিকায়ন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে।
অন্যদিকে শিশুরা যাতে নিজেরা সচেতন হয়ে অধিকার দাবী করতে পারে এবং জীবনের লক্ষ্য নির্বাচনে সক্ষম হয় সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে শিশুদের জন্য মডিউলটি প্রণয়ন করা হয়েছে। মডিউল দুটি প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হল যৌনকর্মী মা ও তাদের শিশুদের যৌন নির্যাতন ও বাণিজ্যিক যৌন শোষণ প্রতিরোধে দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা অধিশাখার পরিচালক ড. মো. মোকতার হোসেন বলেন, যৌন কর্মী মায়েরা অনেক কষ্ট শিকার করে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। তারপরও অনেক ক্ষেত্রে তারা বঞ্চনার শিকার হন। এই মডিউল তাদের সহযোগিতায় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।