আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। এই সফরে ডজনখানেক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আলোচনায় গুরুত্ব পাবে আঞ্চলিক রাজনীতি ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।
সরকার এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে কাতারের আমিরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রায় দুই দশক পর কাতারের কোনো আমির বাংলাদেশ সফরে আসছেন। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ সফর তাৎপর্যপূর্ণ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমিরের সফরে এখন পর্যন্ত ১৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে হয়তো ১০টি সই হতে পারে। চূড়ান্ত হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে নতুন করে সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে, যা সাধারণত এ ধরনের শীর্ষ পর্যায়ের সফরে হয়ে থাকে।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে কাতার। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরিস্থিতিতে শেখ তামিমের ঢাকা সফরে আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার বিষয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই সফর দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতা ছাড়াও ফিলিস্তিন-ইসরায়েলসহ বৈশ্বিক ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে। যেখানে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরবে।’
জানা গেছে, সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হওয়া চুক্তির মধ্যে রয়েছে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বন্দিবিনিময়, দ্বৈত কর প্রত্যাহার ও শুল্ক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা। দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে সইয়ের তালিকায় থাকা এমওইউর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে কাতারে জনশক্তি রপ্তানি, ধর্মীয় বিষয়ে সহযোগিতা, বন্দর ব্যবস্থাপনায় কাতারের প্রতিষ্ঠান মাওয়ানির যুক্ততা, উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা ও কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণের বিষয়।
ভারত ও থাইল্যান্ডের পর কাতারের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি সই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে ১০০ জনের বেশি বাংলাদেশি নানা অপরাধে দণ্ডিত হয়ে কারা ভোগ করছেন কাতারে। চুক্তি হলে দণ্ডিত ব্যক্তিরা কাতার থেকে ফেরার পর সাজার বাকি মেয়াদ দেশে ভোগ করবেন।
গত বছরের মার্চে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। দেশটির আমিরের ঢাকা সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কাতারে কাজ করার কথা। এ মুহূর্তে কাতারের নৌবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এর আওতায় কোস্টগার্ডের সদস্যরা কাতারে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সফরে কাতারের আমিরকে স্বাগত জানাতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। সফর উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের ছবি দিয়ে ঢাকার কয়েকটি রাস্তা সাজানো হয়েছে। প্রায় ১৯ বছর পর বন্ধুপ্রতীম দেশ কাতারের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো ব্যক্তি ঢাকা সফরে আসছেন। ২০০৫ সালের এপ্রিলে কাতারের তৎকালীন আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আলে সানি বাংলাদেশ সফর করেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রীয় অতিথি কাতারের আমির শেখ তামিমকে অভ্যর্থনা জানাবেন। আগামীকাল সোমবার বিকেলে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরকে তার কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানাবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই নেতার বৈঠক হবে এবং এরপর আরও একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।