২০১৩ সালের এই দিনে (২৪ এপ্রিল) সাভারে ঘটেছিল মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। সেদিন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ধসে পড়ে সাভার বাজারের বাসস্ট্যান্ডের নয় তলা রানা প্লাজা। আজ রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১১ বছর।
এটি ছিল সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ভয়াভহ, বীভৎস ও হৃদয় বিদারক ঘটনা। পোশাক কারখানাটিতে কাজ করতেন প্রায় চার হাজার পোশাক শ্রমিক। রানা প্লাজা ধসে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক, আহত হয়েছিলেন ২ হাজার ৪৩৮ জন শ্রমিক।
সেদিনের সেই ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন মা, কেউ বাবা, কেউ ভাই, কেউ বোন, কেউ স্ত্রী, কেউ স্বামী, আবার কেউ হারিয়েছেন তার প্রিয় মানুষটিকে। ভবন ধসের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে চার হাজার পোশাকশ্রমিক। আমাকে বাঁচাও, পানি দাও, আমার হাতটি কেটে আমাকে বের করো- এমন আর্তনাদ। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে শোকের মাতম নেমে আসে পুরো সাভারে এবং সেটা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সাভারের রানা প্লাজার সামনে অবস্থিত অস্থায়ী বেদিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় নিহতদের স্মরণে কিছু সময় নীরবতা পালন করা হয়। নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতের পাশাপাশি রানা প্লাজার ট্রাজেডির সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানায় শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিকদের পরিবার।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতি বছর এই দিনে নিহতদের স্বরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। প্রতি বছরই বিভিন্ন দাবি তুলে ধরি।
দাবিগুলো হচ্ছে, ২৪ এপ্রিলকে জাতীয়ভাবে শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করা, রানা প্লাজার সামনে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা, রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং হতাহত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির কোনোটাই বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে হবে।
ভবন ধসে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় তখন চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ, ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় মামলা করে রাজউক। পাশাপাশি ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুদক। চারটি মামলার মধ্যে সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা নিষ্পত্তি হলেও দীর্ঘ এগারো বছরে বাকি তিনটি মামলা নিষ্পত্তির মুখ দেখছে না। আসামিপক্ষ বলছে, মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিচারহীনভাবে কারাগারে আটক রয়েছেন ভবন মালিক সোহেল রানা। অন্যদিকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির প্রত্যাশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।