অপরাধ

এমপি আনারের লাশ না পেলে মিলবে না মৃত্যু সনদ

ভারতের কলকাতার নিউটাউনে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি মরদেহের অস্তিত্ব। পেশাদার খুনিরা গত ১৩ মে থেকে ১৫ মের মধ্যে আনারকে হত্যা করার পর পুরো শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে মাংস আর হাড় টুকরো টুকরো প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে শহরের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ফেলে দেয়। নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ পাওয়া গেলেও কোনভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না লাশের টুকরোগুলো। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার টানা কয়েকদিনের চেষ্টায়ও পাওয়া যায়নি এমপি আনারের এক টুকরো মাংস।

এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে,  খুন হওয়া মপি আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশ পাওয়া না গেলে কী হবে? ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদই বা কবে মিলবে? এক্ষেত্রে ভারতের আইন কী বলছে?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতায় ‘খুন হওয়া’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের লাশ হয়তো আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না। যদি লাশ না পাওয়া যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ এবং বাংলাদেশ গোয়েন্দা শাখার জন্য তাৎক্ষণিক একটি সমস্যা তৈরি করবে। আর তা হচ্ছে: আনারের মৃত্যুতে কোনও ধরনের ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদ জারি করা যাবে না।

নর্থইস্ট নিউজ আরো জানিয়েছে, বাংলাদেশ গোয়েন্দা শাখার প্রধান ও পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ রোববার কলকাতায় তার আগের কথাই জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হত্যার পর আনারের লাশ টুকরো টুকরো করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ইঙ্গিত দেন, আনারের লাশ হয়তো আর কখনোই পাওয়া যাবে না।

নর্থইস্ট নিউজ বলছে, এমপি আনারের লাশ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া না গেলে ময়নাতদন্ত করা যাবে না, যার অর্থ হলো— তার আত্মীয়দের কাছেও মৃত্যু সনদ হস্তান্তর করা যাবে না। উপরন্তু, ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদ জারি করার আগে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিকে কমপক্ষে সাত বছর অপেক্ষা করতে হবে।

নর্থইস্ট নিউজকে কলকাতার প্রবীণ আইজীবী নবকুমার ঘোষ জানান, মৃত কোনও ব্যক্তির লাশ পাওয়া না গেলে মৃত্যু সনদ জারি করতে সাত বছর সময় লাগতে পারে। এটাই প্রতিষ্ঠিত আইন। সাত বছরের অপেক্ষা বাধ্যতামূলক। লাশ নেই, মৃত্যু সনদও নেই।

সাত বছর পার হওয়ার পর সিআইডির কাছে খোলা একমাত্র যে পথটি থাকবে তা হলো—ভারতীয় সংবিধানের ২২৬ ধারার অধীনে কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা।

অ্যাডভোকেট নবকুমার ঘোষ বলছেন, এরপর উচ্চ আদালত প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। সেই তদন্ত শেষ হলে, উচ্চ আদালত আদেশ জারি করতে পারেন যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু সনদের সমতুল্য হবে।

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, এই পদক্ষেপটির পর ভারতের জাতীয় সংবাদপত্র এবং দূরদর্শন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সেখানে ঘোষণা করা হবে, আনারকে আর কখনোই পাওয়া যাবে না।

নর্থইস্ট নিউজের দাবি, তাদের প্রতিবেদনটিতে সিআইডি-বাংলাদেশ ডিবির মামলায় অনেক ত্রুটি এবং অসঙ্গতি প্রকাশ করা হয়েছে। হত্যাকারীদের বর্ণনায় বেশ কিছু ফাঁক রয়েছে এবং স্পষ্ট এসব ফাঁক থেকে উদ্ভূত প্রশ্নের উত্তর পেতে উভয় দেশের তদন্তকারীদের যথেষ্ট মাথা ঘামাতে হবে।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। দিল্লি যাওয়া কথা বলে বন্ধু গোপালের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন তিনি। সবশেষ ২২ মে নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে জানায় পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button