সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
মোহনা অনলাইন
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। এতে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটছে। ছাতকসহ দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও শান্তিগঞ্জ এই ছয়টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। পানিবন্দি লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
শহরের বাগবাড়ী, মন্ডলীভোগ, হাসপাতাল রোড, তাঁতিকোন, বৌলা, চরেরবন্দ, মোগলপাড়া, ঢাকাইয়া বাড়ি, লেবারপাড়া, পাটনীাড়া, কুমনা, শ্যামপাড়া, বাশখলা সহ আবাশিক এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার বসবাসরত মানুষজন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং মুষলধারে বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে। ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদী। বর্তমানে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার, চেলা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টেমিটার ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ছাতক পৌর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ আমান বলেন, ২২ এর বন্যার চেয়ে ভয়ানক রুপ নিচ্ছে এবারে বন্যা। আমরা ছেলে-মেয়ে নিয়ে বিপাকে আছি। আমার ২ মেয়ের কেউ সাঁতার জানে না। কী হবে এখনো জানি না। বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা জামি আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদেই আছি। কিন্তু আমাদের গবাদি পশু নিয়ে পড়েছি বিপাকে। আমাদের মতো তারাও না খেয়ে আছে।
উপজেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি ও গ্রামীণ কাঁচা সড়ক। পাহাড়ি ঢলের স্রোতের ধাক্কায় উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবতী নীজগাঁও, রতনপুর, বাগানবাড়ি, নোয়াকোট, ধনীটিলা, ছনবাড়ী, দারোগাখালী সড়ক সহ নব নির্মিত ৮-১০টি কাঁচা সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিসহ অবস্থায় দিন পার করছে। উপজেলার ইছামতি-ছনবাড়ীবাজার, শিমুলতলা-মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, ছাতক-জাউয়া, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের বিভিন্ন নীচু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া ছাতক পৌরসভারসহ নোয়ারাই, ছাতক সদর, কালারুকা, উত্তর খুরমা, চরমহল্লা, জাউয়া, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ, দক্ষিণ খুরমা, ভাতগাঁও, দোলারবাজার ও সিংচাপইড় ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যে কোন সময় দেশের সাথে ছাতকের সড়ক যাগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষের জন্য শুকনো খাবার সহ প্রাথমিক সব ব্যবস্থা রেখেছে উপজেলা প্রশাসন।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা মুন্না জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত সহ প্রাথমিক সব ধরনের প্রস্তুতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় সকলকে মানবীয় কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুদ্দোহা বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত কমলে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু ঢলের পানি আসা অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।