সুন্দরবনের মধুকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত করতে সকল তথ্য পর্যালোচনা ও যাচাই করে জার্নাল আকারে প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। জার্নাল প্রকাশের তারিখ থেকেদুই মাসের মধ্যে তৃতীয় কোনোপক্ষের আপত্তি বা বিরোধিতা না পাওয়া গেলে পণ্যটিকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করা হবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক কর্তৃক সুন্দরবনের মধুকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ২০১৭ সালে আবেদন দাখিল করা হয়। ডিপিডিটি ওইআবেদন পরীক্ষান্তে উল্লিখিত বিষয়ে অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ারজন্য আবেদনকারীকে অনুরোধ জানায়। ডিপিডিটির অনুরোধের প্রেক্ষিতে সুন্দরবনের মধুর পুষ্টিগুণ বিষয়ে বিএসটিআই একটি পরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ডিপিডিটিকে পাঠায়। এছাড়াও চাওয়া অন্যান্য তথ্যাদি না পাওয়ায় ওইবিষয়ে শুনানি গ্রহণ করে বাগেরহাটজেলা প্রশাসনের কাছে তথ্য চাওয়া হয়।আবেদনকারী এ বছরের ২৭ জুন তথ্যাদি পুনরায় দাখিল করে।
১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬৬ শতাংশ বাংলাদেশে এবং ৩৪ শতাংশ পড়েছে ভারতে। বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবন থেকে ২০২২ সালে ২৩০ মেট্রিক টন এবং ২০২৩ সালে ৩০০ মেট্রিক টন মধু আহরণ করেছে বাংলাদেশ। যেখানে গত ৭ বছরে ভারতের সংগ্রহ মাত্র ১৩৭ মেট্রিক টন মধু। এরপরেও ২০২১ সালের ১২ জুলাই সুন্দরবনের মধুকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করতে পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমাকর্স অধিদফতরে আবেদন করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন করপোরেশন। যাচাই-বাছাই শেষে গত ২ জানুয়ারি জিআই সনদও দেয়া হয়েছিল ভারতকে। এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত হুঁশ হয়েছে দেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের।
গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্য কেন ভারতের আগে জিআই নিবন্ধন করা গেল না, এমন প্রশ্নে বনবিভাগের ওপর দায় চাপিয়েছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি’র পরিচালক আলেয়া খাতুন। গত ফেব্রুয়ারিতে সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘অন্যান্য মধুর তুলনায় সুন্দরবনের মধুর যে আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেটির গুণগতমানের সনদ কিন্তু বন বিভাগ দিতে পারবে না। সেটি আমাদের বিশেষজ্ঞ দিয়ে বের করতে হবে। তাদের দিয়ে আমাদের বের করতে হবে- এর গুণগতমান অন্যান্য মধুর থেকে আলাদা। সেটি হওয়ার পরই আমরা জিআই দিতে পারব।’
আলেয়া খাতুনের বক্তব্যের সেই প্রক্রিয়াই এখন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। সেইসঙ্গে মিলতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে ‘সুন্দরবনের মধু’র নিবন্ধন।