মিয়ানমারের বিদ্রোহী সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলেও এখন দেশটির নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না জান্তা সরকার। সে কারণে তারা দেশটি ধ্বংস করে ফেলার চেষ্টা করছে বলে সতর্ক করেছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রুস।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থান রক্তপাতহীনভাবে হলেও কয়েক দিন পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে রক্তাক্ত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভ্যুত্থানের পর দেশটির উত্তরাঞ্চলে যে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছিল তা বন্ধে চীনের উদ্যোগে এ বছর জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়েছিল। ওই চুক্তিকে অকার্যকর করে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘুদের সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর একটি জোটের সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর জোট একের পর এক সীমান্তবর্তী শহর ও অঞ্চলের দখল নিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মিয়ানমারের হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘(মিয়ানমারের) জান্তা এখন ব্যাপক চাপে রয়েছে।
‘আবার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলাও প্রতিহত করতে পারছে না। গত প্রায় ১০ মাস ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জান্তা বাহিনী এবং তাদের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এসব হামলার জবাবে জান্তা বাহিনী যেসব পাল্টা হামলা চালাচ্ছে, তাতে মারা যাচ্ছে মূলত বেসামরিক লোকজন।’
‘যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে মিয়ানমার নামে কোনো একক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আর থাকবে না। এ ব্যাপারটি জান্তাও বুঝতে পারছে; কিন্তু তারপরও তারা শান্তি স্থাপনে উদ্যোগ নিচ্ছে না। তাদের এই ভূমিকা মিয়ানমারের জন্য ধ্বংস ডেকে আনবে।’
এ বিষয়ে অ্যান্ড্রুস বলেছেন, ‘জান্তা বাহিনীর সময় ফুরিয়ে আসছে। তারা ক্রমেই দেশটির ওপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। তাদের বহু সেনা হতাহত হয়েছে। তাদের সামরিক সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই জান্তার পরাজয়। এখন এটাই মনে হচ্ছে, জান্তা বাহিনী একটি দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেটি তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘জান্তা ক্রমেই ধ্বংসাত্মক আচরণ করছে। গত ৬ মাসে দেশটিতে স্কুল, হাসপাতাল এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জান্তা দেশটিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে মেতেছে।
এদিকে জাতিসংঘ বলছে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে দেশটিতে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জান্তা যেভাবে সাধারণ জনগণের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে তাতে দেশটি এখন নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর দেশটির উত্তরাঞ্চলে যে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছিল তা বন্ধে চীনের উদ্যোগে এ বছর জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়েছিল। ওই চুক্তিকে অকার্যকর করে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘুদের সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর একটি জোটের সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে।
টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, গত ছয় মাসে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য কের জান্তা বাহিনীর পরিচালিত হামলায় মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশের বহু স্কুল, হাসাপাতাল এমনকি বৌদ্ধ মঠ ও সন্ন্যাসীদের আশ্রমও ধ্বংস হয়ে গেছে।
‘আমরা এখানে বসে যেমনটা ভাবছি, মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা তারচেয়েও অনেক, অনেকগুণ খারাপ,’ নিজ বক্তব্যে বলেন টম